ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালীগঞ্জে রোগীর ভালো দাঁত তুলে দিলেন ভুয়া দন্তচিকিৎসক

কালীগঞ্জে রোগীর ভালো দাঁত তুলে দিলেন ভুয়া দন্তচিকিৎসক

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার খোর্দ্দরায় গ্রামের নুর ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম দাতে তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার সময় কালীগঞ্জ মধুগঞ্জ বাজারের ছন্দা সিনেমা হল সুপার মার্কেটের ভেতরে ফিরোজ ডেন্টালে আসেন চিকিৎসা নিতে। চেম্বারে প্রবেশের পর ডাক্তার সেজে বসে থাকা নুসরাত নামের এক নারী প্রথমে তার দাঁতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পাশে আরেক ভুয়া চিকিৎসক জামাল হোসেন চিকিৎসা কাজে তাকে সহযোগিতা করছিলেন। প্রথমে রহিমা বেগমের মুখে উপরের অংশের মাড়ির যন্ত্রণাকৃত দাঁতটি উঠিয়ে ফেলার জন্য নুসরাত অবশের ইনজেকশন দেন। এরপর নুসরাত সমস্যাজনিত দাঁতটি না তুলে পাশে থাকা ভালো দাঁতটি তুলে ফেলেন। ওই সময় নুসরাতের সহযোগী জামাল হোসেন কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যান। বাইরে থেকে ফিরে দেখেন রোগীর যন্ত্রনাকৃত দাঁতের পাশে থাকা ভালো দাঁতটি ভুল করে তুলে ফেলেছেন নুসরাত। তখন জামাল হোসেন পুনরায় রোগীর যন্ত্রনাকৃত দাঁতটি তোলেন। পাশাপাশি দুইটি দাঁত একই সঙ্গে তোলার কারণে রোগী যন্ত্রনায় ছটফট করেন এবং মাথা ঘুরে পড়ে যান। ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে বুঝতে পেরে চেম্বারে থাকা ডা: ফিরোজুর রহমান (সনদবিহীন ভুয়া ডাক্তার) ডা: মো: সুমন হুসাইনের নামের প্যাডে চারটি ওষুধ লেখে তাতে স্বাক্ষর করে ব্যবস্থাপত্র রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চেম্বার ত্যাগ করেন নুসরাত। ভুল চিকিৎসায় দাঁত হারানো রহিমা বেগমের স্বজনরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে চেম্বারে থাকা জামাল হোসেন ভুল শিকার করে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে জামাল হোসেন দ্রুত চেম্বার বন্ধ করে চলে যান। ব্যবস্থাপত্রে থাকা ডাক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও এ ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ফিরোজ ডেন্টালের ফিরোজুর রহমান দন্তচিকিৎসক না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তিনি এবং তার চেম্বারে থাকা জামাল হোসেনকে দিয়ে দাঁতের রমরমা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চেম্বারে তিনি দাঁতের কাজ শেখানোর নামে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক রাখেন। তারাও দু-একদিন দেখার পর ডাক্তার বনে যান। ঠিক তেমনি নুসরাত নামের ওই নারী একজন দন্তচিকিৎসক না হয়েও দাঁতের চিকিৎসা করেন নিয়মিত। জানা যায়, নুসরাত সম্পর্কে ফিরোজুর রহমানের ছেলের বউ। প্রতিনিয়ত এভাবে ডাক্তার সেজে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে ফিরোজ ডেন্টাল এর কতিপয় সনদবিহীন ভুয়া ডাক্তার। ফিরোজ ডেন্টালের স্বত্বাধিকারী একজন বিডিএস ডাক্তার মাঝেমধ্যে চেম্বারে এনে চিকিৎসা দেন। বাকি সময় এসব ভুয়া চিকিৎসকরায় দাঁতের চিকিৎসা করে থাকেন। আর ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডাক্তার লিখে ব্যবস্থাপত্র তৈরি করে তাতে আবার এন্টিবায়োটিক ওষুধও লেখেন রোগীর জন্য। রহিমা বেগমের স্বামী নুর ইসরাম জানান, যে দাঁতে সমস্যা সেই দাঁত না তুললে ভালো দাঁত কীভাবে তোলে? আগে থেকে বুঝতে পারিনি যে তারা দাঁতের ডাক্তার না। আমার স্ত্রী বারবার নিষেধ করার পরও ওই মহিলা আমার স্ত্রীর ভালো দাঁতটি তুলে ফেলল। পরক্ষণে আরেকজন যন্ত্রণাকৃত দাঁতটি তুলল। এইসব লোক ডাক্তার সেজে কেন মানুষের ক্ষতি করে। আমার স্ত্রীর যে ক্ষতি হলো তা কি আর পূরণ হবে? একদিনও এইসব ভুয়া দন্তচিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। আমি প্রশাসনের কাছে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। কালীগঞ্জ উপজেলা সাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ফিরোজ ডেন্টালে কারা কীভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন তা খোঁজখবর নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত