ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাঁশখালীতে পুরোদমে চলছে শুঁটকি উৎপাদন ও বেচাকেনা

বাঁশখালীতে পুরোদমে চলছে শুঁটকি উৎপাদন ও বেচাকেনা

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার লক্ষাধিক জেলের জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। উপকূলের বিভিন্ন স্থানের সৈকতজুড়ে শুঁটকিপল্লি। রুপালি বালুর মধ্যে কালো জাল ফেলা। সেই জালের ওপর কালো পলিথিনের মুখবন্ধ ব্যাগ সারি ধরে রাখা আছে। সাগর থেকে মাছ ধরে শুকানোর পর তা দেশের বাজার ছাড়াও রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্যে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জেলেদের জীবন। তারপরেও থেমে নেই তারা। জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে সাগর থেকে মাছ আহরণ ও তা শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে জীবন নির্বাহ করছেন তারা। বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি শুকানো কঠিন। শুষ্ক মৌসুমই শুঁটকি শুকানোর উপযুক্ত সময়। দুই শতাধিক নৌকা সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ ও আনা-নেওয়ার কাজ করছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সমুদ্র থেকে আনা মাছ আহরণ, শুকানোসহ বিভিন্ন কাজে এলাকার বহু মানুষ জড়িয়ে পড়ায় এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁশখালী ছাড়া অন্য এলাকার জেলেরা ইউরিয়া সার, লবণ ও বিষাক্ত পাউডার মিশিয়ে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওইসব শুঁটকি খেতেও তেমন স্বাদ নয়। কিন্তু বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের জেলেরা কোনো কিছু মিশ্রণ ছাড়াই রোদের তাপে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। তাই বাঁশখালীর শুঁটকি খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। বাঁশখালীর জেলে পল্লিগুলোতে হাজার হাজার মণ শুঁটকি ক্রয় করতে চট্টগ্রাম শহরের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও চকবাজারের গুদাম মালিকরা দলে দলে হাজির হচ্ছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, বাঁশখালীর শুঁটকির মধ্যে লইট্যা, ছুরি, রূপচান্দা, ফাইস্যা, মাইট্যা, কোরাল, রইস্যা, পোঁহা ও চিংড়ি শুঁটকি অন্যতম। এসব শুঁটকি এখন রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে। শুঁটকি রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও চকবাজারের বড় বড় গুদাম মালিকরা। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও। প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্ট্যা, পোপা অন্যতম। বাঁশের মাচায় রেখে তা শুকানো হয়। বর্ষার কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে মোটামুটি হলেও সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীতে। আর এ শুঁটকি মহালে কাজ করে জীবিকা চালান হাজারো শ্রমিক। শুঁটকি উৎপাদনকারী অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তারা নানামুখি সমস্যায় জর্জরিত। পুঁজির অভাব, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শুঁটকির ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব। অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য নেই কোনো সরকারি নীতিমালা, মনিটরিং, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থা। তাই দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হলেও আধুনিক এবং মানসম্মত পদ্ধতি কোনো উৎপাদকরা গ্রহণ করছেন না। শুঁটকি শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও এর সঙ্গে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী মনে করেন যে, এ মৌসূম তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আড়ৎদাররা জানান, নদী, সাগর থেকে কাঁচামাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি পল্লিতে নিয়ে এসে নারী শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন। এরপর পরিষ্কার পানিতে মাছগুলো ধুয়ে মাচায় শুকাতে দেয়া হয়। তিন চার দিনের রোদে তা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন চরে শুঁটকি পল্লিতে সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জেলে ও শ্রমিক শুঁটকি উৎপাদনকারী একটি জনগোষ্ঠী তাদের জীবিকাণ্ডনির্বাহ করেন এই শুঁটকি উৎপাদনে। অতএব, জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারেন এজন্য তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত