ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার

বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার

নড়াইলে প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্য ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার এখনো টিকে আছে। তবে নদীতে আগের মতো মাছ না পাওয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে। যারা এখনো এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন তারাও ভালো নেই। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাদের। এদিকে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগের কথা বললেও ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের প্রাচীন পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই মৎস্য বিভাগের। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, শত শত বছর আগে থেকে ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের প্রচলন আছে নড়াইল সদর উপজেলার গোয়াইলবাড়ি, পংকবিলা ও রতডাঙ্গা গ্রামে। একসময় এসব অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক জেলেরা এ পদ্ধতিতে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তা কমতে থাকে। মূলত নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়া ও ভোঁদড় লালন-পালনে ব্যাপক খরচের কারণে মাছ শিকারের প্রাচীন এই পদ্ধতিত থেকে সরে আসছেন জেলেরা। বেশি সংখ্যক জেলে তাদের ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে শুধু গোয়াইল বাড়ির ২০টি পরিবার এই পেশায় জড়িত রয়েছেন। তাদের অধীনে পাঁচটি নৌকায় মাত্র ১৬টি ভোঁদড় আছে। ভোঁদড়ের প্রধান খাবার মাছ। তবে ব্যাঙ ও ছোট আকৃতির জলজ পোকাও খায়। এদের জীবনকাল ৯-১০ বছর। গোয়াইলবাড়ি গ্রামের জেলে ভবেন বিশ্বাস বলেন, তার বাপ-ঠাকুরদা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করতেন। এখন তিনি এ পদ্ধতিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এখন নদীতে যে মাছ পাওয়া যায় তাতে কোনোদিন সংসার চলে, আবার কোনোদিন চলে না। শীত মৌসুমে একটু বেশি মাছ পাওয়া যায়। তখন সংসার চালাতে সমস্যা হয় না। কিন্তু বছরের বাকি সময় খালি ঘাটতি। গোপীনাথ বিশ্বাস জানান, আগে তারা সুন্দরবনে যেতেন মাছ ধরতে। প্রচুর পরিমাণ মাছ পেতেন।

এখন সুন্দরবনে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। এখানে অল্প কিছু মাছ হয়। দাম আছে বলে কিছু আয় করেন। না হয় তাদের সংসার চলে না ভালোভাবে। হৃদয় বিশ্বাস বলেন, পাটা জাল ও চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরারসহ বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ কমে গেছে। ভোঁদড় দিয়ে বর্তমানে যে মাছ পাওয়া যায় তা বিক্রি করে সংসার চলে না। আয় কম হওয়ায় ভোঁদড়কে পর্যাপ্ত খাওয়াতেও পারেন না। দিন খুব কষ্টে যায়। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে নড়াইল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এনামুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তারা। মাছ ধরার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কার্ডধারী জেলেদের দুইটি করে ছাগল ও তাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। জেলা মৎস্য অফিসার এইচএম বদরুজ্জামান বলেন, ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে আলাদা তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। বাস্তবতা হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে মাছের পরিমাণ কমে গেছে।

যার কারণে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত