আলু চাষে বাড়তি খরচ

হিমশিম খাচ্ছে চাষি

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

আলুর দাম বেশি পাওয়ায় এবার ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু বীজসহ আলু চাষের যাবতীয় খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার ২-৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হবে ও চাষের সব উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ আছে। তাই আলু আবাদে কৃষকদের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। দেখা যায়, প্রতি বছর আমন ধান কর্তন ও সংগ্রহের পর পরই আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত ও রোপণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাষিরা। এবারও তার কোনো ব্যতয় ঘটেনি।

মাঠে ঘাটে পুরোদমে আলু রোপণ ও পরিচর্যায় চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষান-কৃষানিরা। জেলায় চলতি মৌসুমে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৬৮৪ হেক্টর জমি ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজর মেট্রিক টন আলু। এরইমধ্যে আলু রোপণ সম্পূর্ণ হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে দাম বেশি পাওয়ায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২-৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ বেশি হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর আলুর বীজ, সার, কীটনাশক, সেচের জন্য জ্বালানি তেলসহ মজুরির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আলু রোপণে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা বাড়িত খরচ গুণতে হচ্ছে। গত বছর ১ একর জমিতে ৩৮-৪০ হাজার টাকার বীজ লেগেছিল। এবার দাম বৃদ্ধি পেয়ে তা ৫৫-৬০ হাজার টাকাতে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খরচ তো আছেই। তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

সুগার মিলের জমি লিজ নিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছেন সদর উপজেলার সালন্দর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আলু বীজের দাম এবার অনেক বেশি। প্রতি কেজি বীজের আলু এবার ৫০-৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে সার, বিষ ও মজুরির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেখা যায়, এবার বিঘা প্রতি আলু আবাদ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। আলু চাষি হাফিজ উদ্দিন বলেন, এবার সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

এবার আলু বীজ প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৫০ শতকের ১ বিঘা জমিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। আল্লাহ যদি সহায় থাকেন তাহলে আলু ভালো হবে। মো. ইউসুফ আলী নামে এক আলু চাষি বলেন, গত বছর ১ একর জমিতে আলু বীজ লেগেছিল ৩৫ হাজার টাকার, এবার একই পরিমাণ জমিতে বীজ লেগেছে ৫৫ হাজার টাকার। এবার প্রতি বস্তা সার ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। শীতে বিষ ও কীটনাশকও বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। এতে এবার আলু চাষ করতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। খরচের তুলনায় পরে আবার আলুর দাম বেশি হবে কি না, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাসেল ইসলাম নামে আরেক আলু চাষি বলেন, এবার আলু রোপণ করতেই বিঘা প্রতি ৫০ হাজার এর অধিক টাকা চলে গেছে আমাদের। কৃষকদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপর আলুতে লাভ হবে না লস হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। দেখা যাক কপালে কি আছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যারা আলু চাষ করবেন, তারা পুরো ডিসেম্বর মাস ধরে আলু রোপণ করবেন। এবার যেহেতু আলুর দাম বেশি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে আলু বেশি চাষ করবেন। এবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রার থেকেও এবার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করার সম্ভবনা আছে। আমরা কৃষকদের কারিগরি সহযোগিতাসহ সব প্রকার পরামর্শ প্রদান করছি। আলু চাষের সব উপকরণ মজুদ আছে ও কৃষকরা তা সহজে কিনতে পারছেন। তাই আলু আবাদে কোনো রকম সমস্যা হবে না।