ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভৈরবে গ্রামীণ রাস্তা প্রকল্পে বাড়ছে কর্মসংস্থান

পাল্টে যাচ্ছে অবহেলিত জনপদ
ভৈরবে গ্রামীণ রাস্তা প্রকল্পে বাড়ছে কর্মসংস্থান

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় গ্রামীণ কাঁচা রাস্তার মাটির কাজের মাধ্যমে অতিদরিদ্র গ্রামীণ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সুবিধা ভোগ করছে অতিদরিদ্ররা। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে অবহেলিত গ্রামীণ জনপদের চিত্র। এই প্রকল্প হাতে নেওয়ায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। ফলে একদিকে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় আর্থিক স্বচ্ছলতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কৃষকসহ গ্রামের সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ের অধীনে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রতগতিতে এগিয়ে চলছে। ফলে জেলার ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর, আগানগর, সাদেকপুর ও গজারিয়া ইউনিয়ন জোয়ানশাহী হাওরের কৃষকরা এর সুফল ভোগ করবে। এছাড়া রাস্তাগুলো এলাকার সাধারণ মানুষের সহজ যোগাযোগের জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে (প্রথম পর্যায়) অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। প্রতিটি রাস্তাকে একটি প্রকল্প ধরা হয়েছে। উপজেলার সাদেকপুর, আগানগর, শিমুলকান্দি, গজারিয়া, কালিকাপ্রসাদ, শিবপুর ও শ্রীনগর ইউনিয়নের সর্বমোট ১ হাজার ২৩ জন অতিদরিদ্র মানুষ রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে। যারা দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে ৪০ দিনের এই প্রকল্পে কাজ করবেন। প্রতিজন শ্রমিক হাজিরা হিসেবে দুই ধাপে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৬ হাজার টাকা মজুরি পাবে। এতে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাগুলো যেমন চলাচলের উপযোগী হবে, তেমনি অতিদরিদ্র মানুষগুলো আয়ের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা পাবে। এই কর্মসূচি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে যেন সম্পন্ন হয়, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ পরিদর্শন করেন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করছেন শ্রমিকরা। মাটি ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর গর্ত ও দেবে যাওয়া অংশ সংস্কার করা হচ্ছে। এসব কাজে যাতে কোনো ধরনের ফাঁকি দেওয়া না হয়, সে জন্য হাজিরা নিশ্চিতসহ কাজ তদারকি করছেন সংশ্লিষ্টরা। পথচারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি আর শুকনোর সময় ধুলোর কারণে গ্রামীণ এসব রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর। সরকারি প্রকল্পের আওতায় এসব রাস্তায় মাটি ফেলে সংস্কার করা হচ্ছে। এতে চলাফেরায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রী ও রোগীসহ মানুষের কষ্ট কমবে। এ প্রসঙ্গে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নে অতিদরিদ্র মানুষরা ৪০ দিনের প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে হাজিরা পাবে। আর এ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুইধাপে ১৬ হাজার টাকা পাবে। এই কর্মসূচির আওতায় ওই সব পরিবারগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হবে। পাশাপাশি কাঁচা মাটির রাস্তা গুলো চলাচলের উপযোগী হবে। প্রকল্পে কাজ করেন ঝরনা বেগম। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আমার বেশ উপকার হয়েছে। ৪০ দিন কাজ করে যে টাকা পাব, তা দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসছে। তার দাবি দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা যেন করা হয়। মো. আবুল মিয়া নামে আরেক উপকারভোগী বলেন, এ কাজের সুযোগ পেয়ে বেশ উপকার হয়েছে। আমরা মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে নিজের টাকা নিজেই তুলি। হাজিরার টাকায় পরিবারের খরচ মিটানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে আর সমস্যা হবে না। এ কর্মসূচি যেন চলমান রাখে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামীণ কাঁচারাস্তা সংস্কার হচ্ছে। এতে মোট ১ হাজার ২৩ জন অতিদরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ হয়েছে। মাস্টার রোল অনুপাতে যতজন কাজ করবে। শুধু তারাই তাদের নিজের নামে থাকা সিমের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবে। কাজ না করে কেউ টাকা তোলার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ.কেএম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিদরিদ্র মানুষ আয় করতে পারছেন। সব প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত