ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জবই বিলে উন্নয়ন প্রকল্পের মাছ শিকার শুরু

জবই বিলে উন্নয়ন প্রকল্পের মাছ শিকার শুরু

নওগাঁর সাপাহারে জবই বিল মৎস্যচাষ উন্নয়ন প্রকল্পের ২৩তম মৎস্য আহরণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৬ মাস পর মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করতে পেরে উচ্ছসিত। জালে বিভিন্ন বড় বড় মাছ ধরা পড়ছে। প্রতি বছর ডিসেম্বরে মাছ শিকারের জন্য বিল উন্মুক্ত করে মৎস্য বিভাগ। জালভেদে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে টিকিট নিয়ে মাছ শিকার করতে পারেন মৎস্যজীবীরা। প্রায় ৩২ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করেছে মৎস্য বিভাগ। মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জালভেদে ফাঁস জাল ৩ হাজার ১৮০ টাকা, করজাল ১৫ হাজার ৮৭০ টাকা, বড়জাল ৬ হাজার ১৫০ টাকা, জগৎবেড় ৪০ হাজার ১৬০ টাকা এবং কাঠা প্রতি ১৫ হাজার ৩৯০ টাকা ফি।

এ বছর ফাঁস জাল ৩৪০টি, করজাল ৮৪টি, বড়জাল ৮টি, জগৎবেড় ৩টি এবং কাঠা ৩৬টি জন্য টিকিট কিনেছে মৎস্যজীবীরা। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার। এখানকার ‘জবই বিল’ দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। যার আয়তন প্রায় ৯৯৯ একর। তবে বর্ষা মৌসুমে এর আয়তন হয়ে যায় প্রায় তিন গুণ। প্রাকৃতিকভাবে এ জলাশয়ে মাছ বেড়ে উঠে। বিলুপ্ত প্রজাতির শোল, বোয়াল, চিতল, আইড়, পাবদা, টেংরা, খলিশা, চাপিলা, রুই, কাতলাসহ প্রভৃতি মাছে ভরপুর থাকে এ জলাশয়। বর্ষা মৌসুমে এ জলাশয়ে মাছ শিকার বন্ধ থাকে। মূলত ডিসেম্বর মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত মাছ শিকার করা হয়। প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাসের ২১ তারিখের মাছ শিকারের জন্য বিল উন্মুক্ত করে মৎস্য বিভাগ। চলে মে মাস পর্যন্ত। জালভেদে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে টিকিট নিয়ে মাছ শিকার করতে পারেন মৎস্যজীবীরা। উৎসবমুখর পরিবেশে মৎসজীবীরা শিকার করছে। বিলের মৎস্য প্রকল্পের আওতায় ৭৯৯ মৎস্যজীবী রয়েছেন। এই মৎস্যজীবীদের ওপর তাদের পরিবারে প্রায় ৪ হাজার সদস্য জীবিকা নির্বাহ করে। মাছ শিকারের জন্য মৎস্যজীবীরা নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে কোমর বেঁধে বিলে নেমেছে। জালে মিলছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার, বোয়াল এবং দেশীয়সহ বিভিন্ন মাছ। মাছ পেয়ে উচ্ছসিত তারা। মাছ শিকার দেখতে এবং কিনতে বিল পাড়ে এসেছেন শত শত মানুষ। এ বিলের মাছের স্বাদ অতুলনীয় হওয়ায় চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। মৎস্যজীবী ছাড়াও বিল পাড়ের সৌখিন শিকারিরা মাছ শিকার করছে। মাছ কিনতে বিল পাড়ে বসেছে অস্থায়ী মাছের আড়ৎ। মৎস্যজীবী মানিক বলেন, দুই নৌকায় ৬ জন মিলে ১৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে টিকিট কিনেছি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৯ মণ মাছ ধরেছি। যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। আশা করা যায়, একদিনে লক্ষাধিক টাকার মাছ ধরতে পারব। এছাড়া বাকি দিনগুলোতে কম পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে। পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন- স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। এ বিলের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ৪-৫টি মাছের আড়ত বসেছে। জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। একদিনে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনার আশা। সাপাহার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা: রুজিনা পারভীন বলেন, মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৭৯৯ জন। এর মধ্যে টিকিট সংগ্রহ করেছে ৪৭১ জন। টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১৬ লাখ ১৬০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। আর বাকি টাকা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাহারাদারের বেতন ও অবৈধভাবে বিলে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় খরচ হবে। বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। ৪টি মৎস্য অভয়ারণ্য রয়েছে, যেখানে মা মাছ অবস্থান নেয়। তিনি বলেন, গত বছর ৫২৭ মেট্রিক টন মাছ শিকার করে মৎস্যজীবীরা। যার টাকার অংকে দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৭২ লাখ। এবছর ২০ লাখ পিস বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত