ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চা-বাগান উপড়ে ফেলে দুধ দিয়ে গোসল

চা-বাগান উপড়ে ফেলে দুধ দিয়ে গোসল

দেশের চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অঞ্চল হয়ে উঠলে চা চাষ গলার কাটা হয়ে উঠেছে ক্ষুদ্র চা চাষিদের। বছরের পর বছর ধরে উৎপাদিত চা পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানে রয়েছেন চাষিরা। সে লোকসানের হতাশায় আবাদ করা ৭ বিঘা চা বাগান উপড়ে ফেলে দুধ দিয়ে গোসল করে জীবনে আর চা বাগান না করার ঘোষণা দিয়েছেন শাহজালাল নামের এক চাষি। গত বুধবার জেলার বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায় নিজের তৈরি ১৩ বছরের একটি বাগান উপড়ে ফেলে প্রায় ১০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করে পাপ মোচন করেছেন বলে জানিয়েছেন এ চাষি।

তিনি জানান, ২০১০ সালে বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায় নিজের ৭ বিঘা জমিতে চা বাগান করেন। শুরুতে লাভ হলেও এরপর চলে পালাক্রমে লোকসান। এ পর্যন্ত তার প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসানের জলে পড়েছে বলে দাবি তার। সিন্ডিকেট তৈরি করে চা চাষিদের জিম্মি করে রেখেছে কারখানা মালিকরা। এ কারণে তারা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এমনকি উৎপাদন খরচ উঠছে না তাদের। প্রতি কেজি চা পাতা উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ হয় প্রায় ১৮ টাকা। কিন্তু সেই চা পাতা বিক্রি করে মিলছে মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। তার মধ্যে কারখানাগুলো ওজন থেকে কেটে নিচ্ছেন ২০ থেকে কখনো ৫০ শতাংশ, যা অর্ধেক পাতার দাম মিলছে ৮ থেকে ১০ টাকা। এ লোকসানের কারণে টিকতে পারছে না ক্ষুদ্র চাষিরা। প্রশাসন ও চা বোর্ড কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাই চা কারখানা মালিকদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত হতেই চা বাগান উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। তার এই বাগান করার পাপ হিসেবে দুধ দিয়ে গোসল করলাম। এ দিকে শুধু চা চাষি শাহজালাল নয়।

খবর নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরে বিভিন্ন সময়ে লোকসানের ক্ষোভে চা বাগান কেটে ফেলেছেন অনেক চাষি। গত জুনে তেঁতুলিয়া উপজেলার চিমনজোত গ্রামে চা চাষি কাজিমদ্দিন, সাঈদ, নায়েব আলীসহ বেশ কিছু চা চাষিদের তাদের চা বাগান কেটে ফেলতে দেখা যায়। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা শিল্পের বিপ্লব ঘটে। গত দুই দশকে বদলে যায় তার চিত্রপট। এক সময়ের পতিত জমি হয়ে ওঠে সবুজ চা বাগান। সবুজ পাতায় জেগে ওঠে নতুন অর্থনীতি। চা উৎপাদনে সিলেটের পর দ্বিতীয় অঞ্চল হয়ে উঠে এ জেলা। প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় সাড়ে সাত হাজার চা বাগান। শুধু পঞ্চগড় থেকেই গত বছর ১ কোটি ৫২ লাখ কেজি তৈরি চা উৎপাদন হয়েছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ জড়িয়ে পড়েছেন চা শিল্পে। বেকারদের একটি বড় অংশ চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে চা চাষে বিনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে জেলায় ২৩টি চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু রয়েছে। চা শিল্প বিপ্লবে দেশের দ্বিতীয় চা উৎপাদনে জেলাটি অবস্থান থাকায় গত ২ সেপ্টেম্বর দেশের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র চালু করা হয়। ঠিক এই সময়ে ক্রমাগত চা বাগান কেটে ফেলে উত্তরের এ চা শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছে কি না- এমনটাই আশঙ্কা এ অঞ্চলের সচেতনমহলের।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত