সপ্তাহজুড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়
সকালে রোদের ঝলকানি দেখা গেলেও কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উত্তরের সীমান্ত জনপদ তেঁতুলিয়া। এ অঞ্চলে টানা সপ্তাহ ধরে টানা সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। গতকাল সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। এর আগে ভোর ৬টায় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। সকালে আবহাওয়ার তথ্যটি জানান জেলার প্রথমশ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। আবহাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের ১০ থেকে ৯ ডিগ্রির তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬ দিন। অপর একদিন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সপ্তাহ ধরেই এ জেলায় প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গত এক সপ্তাহ তাপমাত্রা দেখা যায়, ২১ ডিসেম্বর ৯.৬, ২০ ডিসেম্বর ১০.১, ১৯ ডিসেম্বর ৯.৫, ১৮ ডিসেম্বর ৯.৭, ১৭ ডিসেম্বর ১০ ও ১৬ ডিসেম্বর ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল সকাল দেখা মেলে সূর্যের রোদের ঝলকানি। সূর্যের কিরণে আলো ছড়ালেও রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তাপমাত্রার পারদ কমে হাড় কাঁপানো শীত বইতে থাকে। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে হিম সকালেই কাজে যেতে দেখা যায় এ অঞ্চলে পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের। পাথর শ্রমিকরা নদীতে বরফ জলের মধ্যেই নেমে পড়েন কাজে। এ আয়ের মধ্য দিয়ে চলে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ। স্থানীয়রা জানান, বিকেল থেকে হিমেল বাতাসে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের মাত্রাটা বেশি বাড়ে এখানে। রাত বাড়তে থাকলে শীতও বৃদ্ধি পায় অধিকহারে। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ও বিছানা পর্যন্ত বরফ হয়ে উঠে। সকালে গৃহস্থালী করতে গিয়ে কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এ সময়টাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে। তবে সকাল ১০টা থেকেই তাপমাত্রা বেড়ে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকছে। তবে বেলা অবধি এ অঞ্চলের মানুষদের শরীরে শীতের গরম পোশাক পড়ে থাকছেন। মহানন্দা ও ডাহুক নদীতে পাথর তোলা ইরফান, আজগর ও মোতালেবসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিক জানায়, নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা। কিন্তু কী করব, পাথর তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এ পাথর তুলেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তাই পেটের তাগিদেই বরফ জলে নেমে পাথর তুলতে হচ্ছে। চা শ্রমিক আরশেদ, সাইফুল, জামালসহ কয়েকজন জানান, এখন আগের মতো কুয়াশা নেই। কিন্তু কনকনে শীত। ভোরে প্রচণ্ড হিমশীতের মধ্যেই তারা চা বাগানে পাতা তুলতে এসে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কী করব, জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। এদিকে শীতের কারণে বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন শীতজনিত রোগ ব্যাধি। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎকরা চিকিৎসরা পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, এক সপ্তাহ ধরেই তাপমাত্রা ১০ থেকে ৯ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হওয়ায় এ অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে এ এলাকাটি হিমালয় বিধৌত অঞ্চলে অবস্থান থাকায় দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে শীতের মাত্রাটা বেশি থাকে।