ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি পল্লি

বিলুপ্তির পথে কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি পল্লি

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের অন্যতম পল্লি। কিন্তু সেখানে এখন আর সারি সারি মাছের স্তূপ কিংবা শত শত মানুষের কর্মব্যস্ততা চোখে পরে না। অথচ এক সময় সৈকতের বালিয়াড়িতে অর্ধশত ঘর নিয়ে গড়ে ওঠা শুঁটকি পল্লি ছিল জমজমাট। দিন দিন এই পেশা এবং ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে প্রায় সাড়ে চারমাস চলে শুঁটকির ব্যবসা। কেমিক্যাল মুক্ত ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে শুঁটকি তৈরি করায় এখানকার শুঁটকির চাহিদাও অনেক। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয় কুয়াকাটা থেকে। তবে সরকারি সহযোগিতা এবং ১২ মাস শুঁটকি উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে এই বিষমুক্ত শুঁটকি। এমনটাই বলছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে জেলায় মাত্র তিনটি শুঁটকির আড়ত আছে। যেখানে মাত্র ১৫ বছর আগেও ৫০টির ওপরে শুঁটকি আড়ত ছিল।

জেলার তিনটি বড় মৎস্য বন্দর রয়েছে কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর-মহিপুর ও কুয়াকাটায়। এ বাজারগুলো থেকে মাছ সংগ্রহ করে কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লিগুলোতে নিয়ে যান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মহিপুর, আলিপুর, লেবুর চর, গঙ্গামতির চর, গোড়াখালসহ বিভিন্ন চরে মাছের শুঁটকি উৎপাদনে এ সময় ব্যস্ত থাকেন ব্যবসায়ীরা। লইট্ট্যা, ফাইস্যা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, ছোট পোয়া, রইস্যা, রূপচাঁদা, লাক্ষাসহ প্রায় ৩৫ জাতের মাছ শুঁটকি করা হয় এসব পল্লিতে। তবে আগের তুলনায় যা এখন শূন্যের কোঠায়। কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লির ব্যবসায়ী ও তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যে শুঁটকি উৎপাদন করি তাতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। শুধুমাত্র লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রোদের আলো ও বাতাসের সাহায্যে শুঁটকি তৈরি করি। কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা এখান থেকে তাদের পছন্দমতো শুঁটকি সংগ্রহ করেন এবং বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুয়াকাটার শুঁটকি পৌঁছে দেই আমরা। তবে এ বছর ব্যবসার পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। নভেম্বর মাসের বৃষ্টি এবং বৈরী আবহাওয়ায় ৮-১০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। আমরা সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে আরো ভালোভাবে শুঁটকি তৈরি করতে পারব। কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কুয়াকাটায় উৎপাদিত শুঁটকির বেশ সুনাম রয়েছে। এখানে যারা শুঁটকি তৈরি করে তারা বেশ অভিজ্ঞ। গত দু’বছরে কুয়াকাটাসহ কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন পল্লিতে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের একটি পরিকল্পনা আছে এবং আমরা তাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের চেষ্টা করছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটায় মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সব কিছু পরিকল্পিতভাবে করা হবে। সরকার কুয়াকাটাকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে যা সময় সাপেক্ষ বিষয়। শুঁটকি যারা প্রস্তুত করেন ও যারা বিক্রি করেন সবাইকে এক ছাতার নিচে আনা হবে এবং শুঁটকি পল্লিগুলোকে একটি স্থায়ী জায়গায় নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত