ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

উদ্বাস্তু হচ্ছে উপকূলবাসী
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। এর ভয়ংকর প্রভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশের উপকূল ও হাওরাঞ্চলের মানুষ। বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা। মানবেতর জীবনযাপন করছে শিশুরাও। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বহু আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের বাসিন্দা গিরিন্দ্রনাথ রপ্তান। তিনি জানান, এ গ্রামে আগে চারশ পরিবার বসবাস করত। এর মধ্যে দুই শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। এর মধ্যে গিরিন্দ্রনাথ রপ্তানের দুই ভাই সুকুমার রপ্তান ও সুকুপদ রপ্তানের পরিবার চলে গেছে ভারতে। তবে, জন্মভূমি ছাড়েননি গিরিন্দ্রনাথ রপ্তান। গিরিন্দ্রনাথ বলেন, ২০০৯ সালে আইলায় (ঘূর্ণিঝড় আইলা) দুর্গাবাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের সবকিছু নদীগর্ভে চলে যায়। শুধু আমাদেরই নয়, এখানে বসবাস করত রপ্তান, সরকার ও মোড়ল গোষ্ঠীর লোকেরা। তিন গোষ্ঠীরই বেশিরভাগ সহায়-সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি এখন নদীর মাঝখানে। আমরা কোনোমতে অন্যের জায়গায় একটি খুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করি। পরে এক খণ্ড জমি কিনে ঘর বাঁধি। কেন এভাবে উদ্বাস্তু হচ্ছে উপকূলের মানুষ, তার প্রধান কারণ যে জলবায়ু পরিবর্তন, সেই সম্পর্কে গিরিন্দ্রনাথের ধারণা নেই। তবে তিনি জানান, ২০০৯ সালের পর প্রতিবছরই এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হয়েছে উপকূলের প্রতিটি পরিবার। কেউ ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, কেউবা হারিয়েছেন ফসলের জমি। তিনি জানান, অনেকে কর্ম হারিয়ে ছেড়েছেন এলাকা। সেইসঙ্গে বিনষ্ট হয়েছে এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা। বাসিন্দাদের দেহে বাসা বেঁধেছে পুষ্টিহীনতা, বিস্তার লাভ করেছে রোগবালাই। বেড়েছে বাল্যবিয়ে, ঝরে পড়ছে শিশুরা, বাধ্য হচ্ছে শিশুশ্রমে। একই এলাকার বাসিন্দা সুপদ মণ্ডল বলেন, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উপকূলের প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামেরই ৩০টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। স্থানীয় লক্ষ্মী রানী রপ্তান বলেন, পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামে এখন আর ধান হয় না। বার বার ঘূর্ণিঝড় আর নদী ভাঙনে পুরো এলাকা লবণাক্ত হয়ে গেছে। এজন্য এলাকায় আর কাজ নেই, অনেকের ঘরে খাবারও থাকে না। আমার চোখে দেখা নদীর মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে সরকার, রপ্তান ও মোড়ল বংশের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি। শুধু পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে শ্যামনগর উপকূলের পদ্মপুকুর, গাবুরা, মুন্সীগঞ্জ, কৈখালী, আটুলিয়া ও কাশিমাড়ির হাজারো পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। জলবায়ু কর্মী এসএম শাহিন আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। সংকট দিন দিন আরো বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে উপকূলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত