ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ১৫০ বছরের পিতলের রথ

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ১৫০ বছরের পিতলের রথ

রথের কথা মনে পড়লেই চোখে ভেসে ওঠে রথের মেলা বা রথযাত্রার কথা। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে রথযাত্রা ও উলটো রথে দেবতাদের ফিরে আসা অনেক পুণ্যের একটি উৎসব। কাঠের তৈরি সুসজ্জিত রথের সঙ্গে লম্বা দড়ি বেঁধে টানার অংশীদার হওয়ার জন্য লোকেরা ভিড় করেন। সাধারণত কাঠের তৈরি কারুকার্য খচিত রথ দেখা গেলেও আমাদের দেশে রয়েছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ১৫০ বছরের প্রাচীন শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের ১২ চাকার পিতলের রথ, যা ঐতিহ্যের ধারক। এটি নাটোরের নলডাঙ্গায় অবস্থিত। নাটোরের তৎকালীন জমিদার যামিনী সুন্দরী ১৮৬৭ সালে রথটি তৈরি করেন। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রথটি তার জৌলুস ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। স্থানীয়রা জানান, তৎকালীন জমিদার যামিনী সুন্দরী বসাক ১৮৬৭ সালে উপমহাদেশের বৃহৎ ও প্রাচীনতম পিতলের রথটি নির্মাণ করেন। তিনি ১৮৬৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সকল খরচ বহন করতেন। পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৪৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রথের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমদের উদ্যোগে দীর্ঘ ৬৫ বছর পর রথটি ২০১২ সালে তা পুনরায় সংস্কার করা হয়। এর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ও পরবর্তী সময়ে রথটি চুরির কবলে পড়ে। ফলে নকশা, বিভিন্ন অংশ ও পিতলের তৈরি সারথিগুলো চুরি হয়ে যায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামে শ্রী শ্রী মদনমোহন মন্দিরের উঠানে রথটি রাখা হয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার এ রথে পিতলের ১২টি চাকা রয়েছে। চাকার ভেতরে রয়েছে ১২টি পিতলের পাত। রথে রয়েছে একডজন কর্ণার এবং ১১২টি পিলার। বেদির আয়তন ১২ বর্গফুট। প্রাচীন এ রথটি দেখতে প্রতিদিন সনাতন ধর্মের লোকজন আসেন। অনেনে পিতলের রথটি হাত দিয়ে স্পর্শ এবং প্রণাম করেন। সেই থেকে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের তিথি অনুযায়ী রথযাত্রা উপলক্ষ্যে মাধনগরে মাসব্যাপী রথের মেলা ও পূজা-অর্চনা হতো। বীরকুৎসা ও গোয়ালকান্দির জমিদারের হাতি এসে রথযাত্রায় অংশ নিতো ও রথ টানার কাজ করত। এছাড়া অনুষ্ঠান হতো দোল পূর্ণিমায়। বর্তমানে রথ ও মন্দিরের নামে ১০ বিঘা জমি রয়েছে। পিন্টু অধিকারী ও তার ভাইয়েরাসহ স্থানীয়রা একত্রে রথটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পূজা-অর্চনা আয়োজন করে থাকেন। স্থানীয় মানিক চন্দ্র সিং বলেন, ১৫০ বছরের পুরোনো এই রথটি নাটোরের একটি বিশেষ ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম। দেশে অনেক রথ থাকলেও একমাত্র পিতলের রথ এটি, যা উপমহাদেশের অন্য কোথাও খুঁজলে পাওয়া যাবে না। আমরা এলাকাবাসী চেষ্টা করছি, এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে। অর্থ সংকটে আগের মতো জাঁকজমক আর আয়োজন হয় না। কিন্তু সরকার যদি এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন। তাহলে এটির সুনাম দেশব্যাপী প্রসার ঘটবে। শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, আমরা খুবই গর্বিত আমাদের একটি পিতলের রথ রয়েছে। আমরা প্রতি বছর এ রথের মেলার আয়োজন করি। কিন্তু রথটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। রথটি রাখার মতো কোনো ঘর নেই। ফলে খোলা আকাশের নিচে বাধ্য হয়ে রাখতে হচ্ছে। সরকার যদি প্রাচীন এ রথটি সংরক্ষণ করে তাহলে রথের ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আশা করছি। শ্রী শ্রী মদনমোহন মন্দিরের সভাপতি এবং রথের দায়িত্বে থাকা শ্রী পিন্টু অধিকারী বলেন, ১৯৪৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে রথের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা এ রথটি পুনরায় সংস্কার করি। এরপর থেকে নিয়মিত স্বল্প আয়োজনে পূজা ও রথযাত্রা করে আসছি। প্রাচীন এ রথটি শুধু বাংলাদেশে নয় ভারতেও পিতলের রথ দেখিনি। এটি আমাদের দেশে ঐতিহ্য এবং সুনাম। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগের প্রয়োজন। বছরের পর বছর রথটি খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। ফলে দিনে দিনে রথের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত