শীতের পিঠায় জীবিকা

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ঋতু অনুযায়ী দেশে এখন শীতকাল। শহরে খুব একটা না হলেও গ্রামীণ জনপথে জেঁকে বসেছে শীত। তাই শীতে একটুখানি উষ্ণতা দিতে এরই মধ্যে নিজেদের সাধ্যমতো হরেক রকমের শীতবস্ত্র গায়ে জড়িয়েছেন সবাই।

একই সঙ্গে বাহারি ধরনের শীতের পিঠাপুলির আয়োজন চলছে সব স্থানে। শীতকালে শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠাপুলির আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই চলছে। কিন্তু দিন দিন নানা ব্যস্ততা ও ব্যাপকহারে ডিভাইস আসক্তির কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে শীতের পিঠা বানিয়ে খেতে পারেন না। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে পিঠার দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মেটাচ্ছেন অনেকে। এদিকে শীতকে কেন্দ্র করে নবান্নের নতুন চালের পিঠার স্বাদ নিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ব্যস্ততম সড়কের পাশে সস্ত্রীক ও ছেলেসহ শীতের ভাপা ও চিতই পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান জয়নাল আবেদিন। পিঠার মৌ মৌ গন্ধ যেন ভরে আছে চারপাশ। কুয়াশা এড়াতে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্রসৈকতের ছাতা ব্যবহার করছেন তিনি। জয়নাল তার স্ত্রী ও ছেলে পুরো পরিবারসহ সকলে একই স্থানে পিঠা বানাচ্ছেন। এ চিত্র দেখে অনেকেই কৌতূহলবশত পিঠা খেতে ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। জয়নালের বাড়ি মাটিরাঙ্গার মাতাব্বর পাড়ায়।

৫ বছর ধরেই পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বাকি সময়গুলোতে তিনি একই এলাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের একটি মাত্র ছেলে, ছেলেটিও তাদের সাথে পিঠা বানিয়ে থাকেন। চক্রাকারে একজন বিশ্রাম নেন অপরজন পিঠা বানান। শীতের পুরো সময়জুড়ে পিঠা বিক্রি করেবেন তারা। বাহারি স্বাদের সরিষা ও শুঁটকির ভর্তাসহ প্রতিটি চিতই ও ভাপা পিঠা ৫ টাকা করে দৈনিক ১৫ কেজি চাউলের প্রায় দেড় ২ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করা হয়।

এ দিয়ে চলে যায় পুরো সংসার। পিঠা বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, শীতের পিঠা বিক্রি করি ভালোলাগা থেকে। একই সাথে নিজের পারিবারিক চাহিদাও মিটে যায়। এ পিঠা বিক্রি করে ভালোই আছি। তেমন কোনো পরিশ্রম নাই তাতে। পিঠার মান ও স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা ঢেঁকিতে চাল গুড়া করে পিঠা বানাই। দামে কম এবং রকমারি স্বাদের ভর্তা দেওয়া হয় বিধায় আমার পিঠা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নানান স্বাদের পিঠা ছাড়া শীত যেন জমেই না জানিয়ে পিঠা খেতে আসা লাভলু জানান, আমি প্রতিদিন এখানে পিঠা খেতে আসি। ভাপা পিঠা আমার খুবই প্রিয় তাই দৈনিক চার-পাঁচটি করে খাই। যাওয়ার সময় সহকর্মীদের জন্যও নিয়ে যাই। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষা, শুঁটকির ভর্তা, সাথে ধনেপাতা এ যেন এক ব্যতিক্রম মুখরোচক স্বাদ। খুব ভোরে বা বিকালে চাদর গায়ে দিয়ে পিঠা খেতে যাওয়া অন্যরকম আনন্দ দেয় মন্তব্য করে পিঠা কিনতে আসা সুমন জানান, এখানকার রকমারি পিঠার সঙ্গে পাওয়া যায় নানান ধরনের ভর্তা এর স্বাদ যেন চিরচেনা।

আমি শিতের পিঠা খেতে খুব পছন্দ করি তাই পরিবারের সবার জন্য কিনতে আসছি। ঐতিহ্যগতভাবেই শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠাপুলি বাঙালির অনন্য আয়োজন জানিয়ে মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জয়নাল বলেন, খেজুরের গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা আর চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা, যা পাহাড়ের এ জনপদে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া শীতের পিঠা মনে এক চিলতে গ্রামে ফেরার আকুলতা তৈরি করে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে এসব পিঠাপুলি বেঁচে থাকুক অনন্তকাল ধরে।