বিলুপ্তির পথে বাঁশের তৈরি সামগ্রী

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

একসময় গ্রামগঞ্জে বাঁশ ও বেতের দ্বারা তৈরি পণ্যই ছিল জিনিসপত্র রাখার ভরসা। গোলাভরা ধান যে পাত্রে রাখা হতো সেই গোলাই তৈরি হতো বাঁশ কিংবা বেত দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের দাপট এবং সহজলভ্যতার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বাজার দখল হওয়ায় এসবের ব্যবহার আর কারিগরদের দেখা মেলে না। যাও আছে তা হাতেগোনা কয়েকজন কারিগর। পেশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। যারা ধরে রেখেছে তাও নগন্য। নতুন কারিগর সৃষ্টি না হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে এক কালের গ্রামে জৌলুশ নিয়ে চলা বাঁশ আর বেতের তৈরি তৈজসপত্র। একটা সময় গ্রামের প্রতিটি ঘরে ছিল বাঁশ আর বেতের দ্বারা তৈরি নানা তৈজসপত্র। ধান মাপার পালা, ধামা সের, গোলা, কুলা, চালনি, পানডালা, ধানের গোলা, নানা রঙ্গের চটই, ছোট ছোট পাটি, খেলনা, গরুর ঠুসি, কলমদানি, কাস্তের ঠোঙ্গা, বাঁশি, ফুলদানি, তরকারি ঢাকনা, চাল মাপার পুরাসহ নানান রকমের আসবাব। এসবের দেখা মেলে না এখন আর তেমনটা। আধুনিক সময়ে এসে এসবের ব্যবহার নাই বললেই চলে। এখন উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে।

আগে গ্রামের বাড়িতে প্রায়শই দেখা মিলত বাঁশ আর বেতের। এগুলো এখন আর চোখেও তেমন পড়ে না। বাঁশের দেখা কিছুটা মিললেও বেতের দেখা মিলছেই না। একদিকে যেমন ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা তেমনি কারিগরদের মজুরি এবং বাঁশ আর বেতের সংকটে এ পেশা বিলুপ্তির পথে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উন্নত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক ঋণ চায় এখানকার কারিগররা। ২৫ বছর ধরে কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের পুলিন ব্যাপারী। তিনি বলেন, একটা সময় খুব বিক্রি ভালো ছিল। উৎপাদন খরচ ও কাঁচামালের দাম কম থাকার পাশাপাশি মানুষের চাহিদাও ছিল বেশ। সব মিলিয়ে ভালোভাবেই চলত দিনগুলো। এখন কাঁচামালের অভাব আর উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এ শিল্প একেবারেই শেষের পথে। লোকজনের চাহিদাও কম। সব মিলিয়ে যেন এ শিল্পটা আর থাকল না। সুনিল চন্দ্র ব্যাপারী বলেন, এখন এগুলোর চল নাই। পরিবর্তন আইছে এ জগৎটায়। আমরা উন্নত প্রশিক্ষণ পাই না। এখন গ্রামে কোন বাঁশঝাড় নাই। আনতে হয় বাইরে থেকে ১ টাকার মাল ৭ টাহা দিয়া। শ্রম দিয়া সঠিক মূল্য পাই না। ছেলে মেয়ে বউ এদের নিয়ে সংসার চলে না। নূরজাহান লাইভস্টক অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মো. নাইম বলেন, এক সময় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে বাঁশ আর বেতের ঝাড় ছিল। এখন এসবের দেখাই মেলে না। ব্যবহারের ক্ষেত্র ছিল বহু। গাছে বেড়া দেওয়া থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র। সব যায়গায় ছিল বাঁশ আর বেতের ব্যবহার। এখন মানুষজন এগুলোর ব্যবহার আর বন জঙ্গল উজাড় পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়া না দেওয়ায় ঐতিহ্যের কুটিরশিল্প একেবারে শেষের পথে। পটুয়াখালী জেলার বিসিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলমগীর সিকদার বলেন, বিভিন্ন সেক্টরেই আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। কুটিরশিল্পের নানা জিনিসপত্র এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। যে পরিমাণে চাহিদা রয়েছে সে পরিমাণ আমরা রপ্তানি করতে পারছি না। আমাদের বছরে ২ থেকে ৩ বার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তারা আসলে আমরা উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি। পেশায় ভ্যারিয়েশন আনতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতেও ভালো বিক্রি হয়। তবে অনেকে নতুনত্ব না আনায় বাজারে টিকতে না পেরে ছিটকে পড়ছে।