কাঁসা-পিতলের দাম ঊর্ধ্বগতি কমেছে চাহিদা

হারাতে বসেছে ঐতিহ্য

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

এক সময় বিয়ে কিংবা সামাজিক সব অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে কাঁসা-পিতলের বাসন দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। নিখুঁত নকশার এসব তৈজস ওজন ও নকশা দিয়ে মূল্যায়ন করা হতো। টেকসই, মজবুত ও দামে কম হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি ধাতুর তৈরি এসব বাসন ছিল। যা প্রতিদিনই ব্যবহার করা হতো। তবে দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতাদের কাছে কমেছে চাহিদা। এ কারণে নওগাঁয় কাঁসা-পিতল থেকে তৈরি বাসনের জৌলুস হারাতে বসেছে। হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা এখন টিম টিম করে টিকে আছে। কর্ম হারিয়ে জীবিকার তাগিদে অনেক কারিগর এখন চলে গেছে ভিন্ন পেশায়। ধাতুর তৈরি ঐতিহ্যবাহী এসব বাসন টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। ২০০০ সালের পর থেকে কাঁসা-পিতলের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। সে সময় কাঁসা ৭০০ টাকা এবং পিতল ১৮০ টাকা কেজি ছিল। বর্তমানে নতুন কাঁসা ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিতল ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। এছাড়া পুরাতন কাঁসা ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিতল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁসা-পিতলের তৈরি তৈজস এখন রোজ ব্যবহার না হলেও উৎসব উপলক্ষ্যে এখন অনেকে ব্যবহার করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ধর্ম পালনে কাঁসা-পিতল ও তামার তৈরি পূজার নানা সামগ্রী ব্যবহার করে। তবে ব্যবহার করলেও কদর কমেনি এসব বাসনের। বর্তমানে এসব বাসনের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে কমেছে চাহিদা। এর স্থান দখল করেছে চিনামাটি, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র। দাম স্বল্প হওয়ায় মানুষ কিনতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নওগাঁ শহরের পুরাতন আলুপট্টিতে এক সময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত ছিল। এ পট্টিতে ছোট-বড় প্রায় ২০টি কারখানা ছিল। যেখানে প্রায় শতাধিক মালিক ও কারিগরের কর্মসংস্থান হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে সেখানে হাতে গোনা ৫টি কারখানা রয়েছে। যেখানে কাজ করছে মাত্র ১২ জন কারিগর। তাদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কারিগর কাজল হোসেন। তিনি গত ৩০ বছর থেকে কাঁসা-পিতল থেকে বিভিন্ন বাসন তৈরির কাজ করছেন। তার কারখানায় ৫ জন শ্রমিক ছিল। বর্তমানে দুই ভাই মিলে এ কাজ করছেন। নতুন ধাতুর বাসন তৈরি না হলে পুরাতন বাসনকে ঘষামাজা করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলছে তাদের জীবিকা। তবে আগের মতো কাজের চাপ না থাকায় কমেছে আয়। অনেকেই এখন জীবিকার তাগিদে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। যারা এখনো টিকে আছে তারা সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন। শহরের ডাবপট্টি এলাকার সঞ্চিতা মেটাল স্টোরের স্বত্বাধিকারি গোপাল সাহা বলেন- কাঁসা-পিতলকে বলা হয় রাজকিয় ব্যবসা। গত ৩০ বছর এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। কাঁসা-পিতলের বাসনপত্রে মানুষের চাহিদা আছে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ১০ বছর থেকে কমেছে এর জৌলুস। আগে সাতটি দোকান ছিল এখন ৫টি আছে। আগে যে ব্যবসা ছিল তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূলধন হারিয়ে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। তারপরও গড়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। ওজন হিসেবে একটি থালার দাম পড়ে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, গ্লাস ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা, বাটি ৫০০ টাকা, ঘটি ১ হাজার ১০০ টাকা, বদনা ৮০০-৯০০ টাকা। অনেকে অর্ডার করে বড় বাসন তৈরি করে নেয় তখন দামও বেশি হয়। নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরী উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন- যে কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিসিক সহযোগিতা করে থাকে। এ শিল্পের সাথে জড়িতরা যদি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোসহ প্রশিক্ষণ, মার্কেটিং এবং বিনিয়োগ করতে চায় সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। সম্ভবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।