পাহাড়ের কান্না শোনে না কেউ

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় চুনতি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাতগড় লম্বা শিয়ার পাহাড়ের মুখ এলাকায় সংরক্ষিত বন বিভাগের জায়গায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন যেন থামছেই না। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সম্পদ, যা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ওই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল।

তবে অন্যায়ভাবে পাহাড় কাটার ফলে তাদের আবাসস্থল নষ্টের সাথে দেখা দিয়েছে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট। ফলে মাঝেমধ্যে বন্য হাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে এসে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। এছাড়া ফসলের ক্ষতিসহ মানুষের প্রাণহানী ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এসব এলাকার লোকজন চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন। বালু নিলাম নেওয়া ব্যক্তি ও উত্তোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা যোগসাজশ রয়েছে। কারণ বালু উত্তোলনকারীরাই তাদের উত্তোলনকৃত বালুগুলো বারবার নিলাম নিয়ে থাকে। প্রশাসনও তাদের সুযোগ দেওযার জন্য মাস দেড়েক পরে একবার অভিযান চালিয়ে আসে। প্রসঙ্গত গত বছর বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখানে একটি হাতি শাবক গর্তে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বালু উত্তোলন করার ফলে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় হাতির দল নিয়মিত বিচরণ করে। আর মাত্রাতিরিক্ত বালু পরিবহনের গাড়ি চলাচলের ফলে সড়কের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে আমাদের চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ধুলোবালি সারা শরীরে এমনকি নাকের ভিতর ঢুকে যায়, যা পরবর্তীতে শ্বাস কষ্ট হয়। এই পাহাড় নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ঝুঁকির মধ্যে, যা পরিবেশ প্রকৃতির জন্য এক মহাবিপদ সংকেত। এভাবে দিন কিংবা বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। তারা আরও জানান, বেশ কয়েকদিন আগে অভিযানে বিপুল পরিমাণ বালু জব্দ করা হলেও আবার শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে তারা। স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশবাদী কর্মী ও শিক্ষক সানজিদা রহমান বলেন, বালু উত্তোলন এখানকার একটি নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ এইটা ধরে নিয়েছে বা এটা শিক্ষার অভাব বা সচেতনতার অভাব হতে পারে। এই বালু উত্তোলন একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে, আমি প্রায় দেড় বছর যাবৎ পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি, এখানে দেখা যাচ্ছে অবৈধ বালু যখন প্রশাসন এসে জব্দ করে নিলামে, বিক্রি করে দেয়, তখন ওই সিন্ডিকেটরা কিনে নেয়। যে পরিমাণ বালু সিন্ডিকেটরা বের করছে প্রশাসনের সাহায্যে সে পরিমাণ বালু ওই স্থানে ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর অর্থদণ্ড কিংবা অন্যান্য আইনি দণ্ডে দণ্ডিত করতে হবে এবং দুর্গম পাহাড় কেটে যে রাস্তা করছে তা বন্ধ করে সিলগালা করে দিতে হবে। লোহাগাড়া উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুন লায়েল বলেন, জব্দকৃত বালু নিলামে দেওয়ার পর নতুন করে বালু উঠানোর কোনো সুযোগ নেই। লম্বা শিয়াসহ অন্যান্য পাহাড় কাটা বন্ধের ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে আলোচনা করে একটা স্থায়ী পদক্ষেপ নেব। এই অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটি কিংবা বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিও পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। সেখান থেকে উত্তরণের সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুনতি রেঞ্জাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে যাচাই করে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করব। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড় ও পাহাড়ের ভেতর চলমান ছড়া থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালু তোলা হলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর। তাই কাউকে পাহাড় ও বনের ভেতর চলমান ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয় না। যারা এসব করছেন অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।