মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আখের গুড় তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ঋতুর পরিবর্তনে ধীরে ধীরে বাড়ছে শীতের আমেজ। শীত এলেই শুরু হয় বাঙালির পিঠা-পুলির মহোৎসব। পিঠা উৎসবে গুড়ের যেন জুড়ি নেই। শীতের হিমেল বাতাস বইতে না বইতেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আখ চাষিরা।
একদিকে আখ কেটে সংগ্রহ করা হচ্ছে, অন্যদিকে কেটে আনা আখ থেকে মেশিনের মাধ্যমে চলছে রস সংগ্রহ। সেই রস ছেঁকে রাখার পর ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা জাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। এরমধ্যেই এ গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গজারিয়ার আখ চাষিরা। জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গজারিয়ায় এসে তরিকুল দীর্ঘ ৪ বছর ধরে আখ চাষ করে গুড় তৈরির ব্যবসা করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেখে মুন্সীগঞ্জে এসে আখ চাষ করার কারণ কি- এমন প্রশ্নে তরিকুল বলেন, আমি আগে জীবিকা নির্বাহ করতাম হরেকরকম পণ্য বিক্রি করে। তবে আখ চাষের পদ্ধতি আমার জানা ছিল। আর মুন্সীগঞ্জ রাজধানীর লাগোয়া জেলা হওয়ায় এখানে আখের গুড়ের দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। তাই আমি গজারিয়ায় আখ চাষ করে তার রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বিক্রি করছি। শীত মানেই বাঙালির কাছে যেন পিঠা-পুলির উৎসব শুরু হওয়া। গজারিয়ার বাউশিয়া ও টেংগারচর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ্পুর ও টেংগারচর গ্রামের মাঠগুলোতে দেখা যায়, আখের গুড় তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন আখ চাষিরা। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে এই এলাকায় আখ চাষ করে আসছেন তরিকুল ইসলাম।
তিনি শীত মৌসুমে আখ থেকে গুড় তৈরি করেন। যদিও আগের মতো আখ চাষ না থাকায়, তেমন একটা চোখে পড়ে না, রস থেকে গুড় তৈরি করার দৃশ্য। সরেজমিন দেখা যায়, কৃষকরা আখ থেকে পাতা ও আগা বাদ দিয়ে শুধু আখ বের করে আলাদা করে রাখছেন। তারপর সেই আখগুলো থেকে কারিগররা একটি মেশিনের মাধ্যমে রস বের করছেন। তার পাশেই বড় চুলা তৈরি করে তার উপর দেওয়া হয়েছে বড় আকারের একটি লোহার কড়াই। তাতেই আখের ২০০ শত কেজি রস ঢেলে জ্বাল দিচ্ছেন। প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখার পর তা শক্ত হয়। ২০০ কেজি রস থেকে ৩৫ থেকে ৩৬ কেজির মতো গুড় পাওয়া যায়। পরে কারিগরদের হাতের সাহায্যে গুড়গুলোকে জেলটিনে রেখে দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় আখের রস থেকে সুস্বাদু গুড়। আখের গুড় কিনতে আসা স্বপন মিয়া বলেন, আমাদের চোখের সামনে আখ থেকে গুড় তৈরি করা হচ্ছে।
কোনো প্রকার কেমিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে না, ভেজালমুক্ত গুড় পাচ্ছি। আর খোলা-বাজারের তুলনায় দামও কিছুটা কম। আমাদের বাসায় অতিথি এসেছে। শীত পড়েছে, অতিথি আপ্যায়নে শীতের পিঠা রাখার জন্য গুড় কিনতে আসছি। তবে গজারিয়ায় আগে এ আখচাষ এবং গুড় তৈরি কর্মযজ্ঞ ছিল ব্যাপক। কিন্তু প্রতিনিয়তই এ আখ চাষ আর গুড় তৈরি হ্রাস পেতে শুরু করছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আরাফাত বিন ছিদ্দিক বলেন, চলতি মৌসুমে গজারিয়া উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে আখ আবাদ হয়েছে। এখন কৃষকরা আখ কর্তন ও গুড় তৈরি করছেন। এতে আশা করা যায় উপজেলায় গুড়ের চাহিদা কিছুটা মেটানো যাবে। অনেক কৃষক অন্যান্য ফসল উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন। তবে আখ আবাদে আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে থাকি।