ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘোড়া দিয়ে হালচাষ

ঘোড়া দিয়ে হালচাষ

গরু-মহিষের বদলে এখন জমি চাষ করা হচ্ছে ঘোড়া দিয়ে। এক সময় ওই বাহনে চড়ে রাজা-বাদশাহরা চলাফেরা করতেন। সেই আদিকাল থেকেই কৃষি কাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘোড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে গরু-মহিষও ব্যবহার হতো। ঘোড়া দিয়ে হালচাষে কৃষক হচ্ছে লাভবান। কৃষকরা গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহি গরু-মহিষের হাল আজ বিলুপ্তির পথে। গরু-মহিষের হাল তেমন আর চোখে পড়ে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে কৃষকরা পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমিতে হালচাষ করছেন। এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ। এতে স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা সম্ভব। অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে যখন গরু দিয়ে হালচাষ বিলুপ্তির পথে তখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মো. হানিফ নামে এক কৃষক। শুধু জীবিকা নির্বাহই নয়- নিয়মিত ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে স্থানীয়দের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। উৎসুক লোকেরা বলছেন- দীর্ঘকাল ধরে রণক্ষেত্রের পাশাপাশি মালামাল ও মানুষ পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে আসলেও কালের পরিক্রমায় তা আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করা এক বিরল ঘটনা। হানিফ চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল বিকালে দেখা যায়, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন কৃষক হানিফ। ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ দেখতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় জমান। কৃষক হানিফ জানান, বর্তমান বাজারে একজোড়া হালের গরুর দাম কমপক্ষে এক লাখ টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম অনেক কম। কিছুদিন পূর্বে তিনি মাত্র ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দুইটি ছোট সাইজের ঘোড়া কিনেছেন। এ ঘোড়া দুইটি দিয়ে তিনি প্রতিদিন এক থেকে দেড় বিঘা জমি চাষ করছেন। তিনি নিজের জমি ছাড়াও গত ৩ বছর ধরে অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন। তিনি আরো জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া হাঁটে-চলেও অনেক বেশি। ফলে গরুর হালের চেয়ে একই সময়ে ঘোড়া দিয়ে তিনগুণ বেশি জমি চাষ করা যায়। ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে হালচাষ করতে পারেন।

তিনি জমি চাষ করতে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা করে নেন। এতে তার প্রতিমাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ঘোড়া দুইটির খাদ্যবাবদ দৈনিক ১০০ টাকা করে খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের খরচ চলে। এ ঘোড়ার হাল দিয়েই তিনি ঘোড়াচ্ছেন তার জীবিকার চাকা। ঘোড়ার হাল দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই তিনি সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন। হালচাষ বা জমিতে মই দিয়ে যা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই সংসার ভালোভাবেই চলে। কৃষক হেলাল জানান, ঘোড়ার হাল দিয়ে ট্রাক্টরের মতো জমি গভীরভাবে চাষ হয়। খুব সহজেই জমি প্রস্তুত করা যায়। তাই এলাকায় হানিফের ঘোড়ার হালের বেশ চাহিদা রয়েছে। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়িও উঠে গেছে। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা দুর্লভ একটি বিষয়। কৃষি বিভাগ আধুনিক মানের যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত