দিনাজপুর-৬

ভোটারের জন্য পিকনিক স্পট ফ্রি করলেন নৌকার প্রার্থী

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কামরুল হুদা হেলাল, দিনাজপুর

উত্তরাঞ্চলের সাড়া জাগানো পিকনিক স্পট ‘স্বপ্নপুরী’তে প্রবেশ ফ্রি করেছেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিবলী সাদিক। সংসদ সদস্যের এমন কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ তুলে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ওই আসনের দুইজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী। সংসদ সদস্যের এমন কর্মকাণ্ডটি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার। দিনাজপুর-৬ আসন বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে অবস্থিত পিকনিক স্পটটি ‘স্বপ্নপুরী’ বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের। এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিবলী সাদিক। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে এই আসনের ৪টি উপজেলার ভোটারদের জন্য স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ ফ্রি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এই আসনের ৪ উপজেলার ভোটারদের এনআইডি কার্ড প্রদর্শন করে পিকনিক স্পটে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এছাড়াও পিকনিক স্পটের ভেতরেও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার জন্যও এনআইডি কার্ড প্রদর্শন করে কোনো ধরনের ফি ছাড়া সুবিধা দেয়া হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) শাহনেওয়াজ ফিরোজ শুভ বলেন, এমপি শিবলী সাদিক স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ ফ্রি করে নিজেকে কি মানবতার ফেরিওয়ালা প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এটা তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এটা নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন। পিকনিক স্পটে টিকেট বিক্রি হলে সরকার এটা থেকে রাজস্ব পাবে। এটাতো সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী বলেন, এমপি শিবলী সাদিকের এমন কার্যক্রম নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। তিনি এ ধরনের প্রণোদনা দিতে পারেন না। তিনি আগে দিতে পারেন নাই কেন? শুধু সেটাই নয়, তিনি আমাদের কোনো জায়গায় পোস্টার রাখছেন না। সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। আমাদের একজন কর্মীকে মারধর করেছে। আমি সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে বহুবার মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। এসব কর্মকাণ্ডকে এড়িয়ে যাচ্ছি। যদি এড়িয়ে না যাইতাম তাহলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতো। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শিবলী সাদিককে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব দেননি। তবে পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরীর ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আসনের ৪টি উপজেলার ভোটারদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। তবে ফেসবুকে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বপ্নপূরীতে প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। এই আসনের লোকজন অনেকে স্বপ্নপুরীতে ঘুরতে আসছেন। তবে এটি নির্বাচনের কারণে ফ্রি করা হয়নি। সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, কোনো প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় কোনো ধরনের অনুদান, উপঢৌকন ও খাবার দিতে পারবেন না। পিকনিক স্পট ভোটারদের জন্য ফ্রি করার ঘটনাটি উপঢৌকনের মধ্যে পড়ে কি না তা দেখা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বপ্নপুরীর এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।