মৃত শিল্প হারিয়ে গেছে প্রায়

বেকার হয়ে পড়েছে উপজেলার ২ হাজার পরিবার

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিনে দিনে ব্যবহার কমছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মাটির তৈরি এসব জিনিসের বদলে বাজার দখল করছে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও সিরামিকসহ অন্য সব সামগ্রী। তাই আধুনিক প্রযুক্তির তৈজসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মাটির তৈরি অনেক পণ্যই হারিয়ে গেছে। কিন্তু মাটির তৈরি কিছু তৈজসপত্র এখনো দেখা যায়। শহরবাসীর দালান- কোটা সাজাতে মাটির তৈরি নানা পট, ফুলদানি ও বাহারি মাটির হাঁড়ির কদর রয়েছে এখনো। জানা গেছে, ৩০ বছর আগেও সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে মৃৎশিল্পের দাপট ও কদর দুটোই ছিল। তখন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করত।

ওই সময় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটির তৈরি এসব তৈজসপত্র সরবরাহ করা হত। কিন্তু বর্তমানে এ উপজেলায় ২ শতাধিক পরিবার মৃৎশিল্পের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আগের মতো চাহিদা আর পারিশ্রমিকের ন্যায্যমূল্য না থাকায় এ পেশার লোকজন অত্যন্ত দুঃখ-দুর্দশা আর হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় অন্য পেশায় তেমন খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারা। কম লাভ জেনেও শুধু পারিশ্রমিকের আসায় বাপ-দাদার পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো মাটি দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি, সরা, কলস, বাসন, মুড়ি ভাজার খোলা, কোলা, পিঠা তৈরির খাঁজ, জালের কাঠি, মাটির ব্যাংক ও জলকান্দা ইত্যাদি। শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কুমারপল্লীতে ঢুকলেই চোখে পড়ে তাদের কষ্টের জীবনযাত্রা। গোটা পল্লিতেই যেন লেগে আছে শত কষ্ট আর অভাবের ছোঁয়া। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওই পল্লির একাধিক বয়স্ক নারী কারিগররা তাদের নিজ হাতে মাটি দিয়ে তৈরি করে শিল্পকর্মগুলো খুব যত্ন সহকারে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। আর তাদের সাহায্য করছে পাড়ার ছোট ছোট বাচ্চারা। কুমার পল্লির সাবিত্রি পালের উঠানজুড়ে রয়েছে হাঁড়ি-পাতিল, কড়াই, কলস, বাসন, দইয়ের বাটিসহ ছোট-বড় নানা রকমের পাত্র। এই পল্লিতে প্রায় ৪০-৪৫ পরিবার কম বেশি কাজ করত। তবে ভালো আছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। এখানে বর্তমানে মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি তৈজসপত্রের পণ্য। এ সময় সাবিত্রী পাল বলেন, আগের তুলনায় মাটির হাঁড়ি-পাতিলের চাহিদা কম। তৈরি করছিও কম, বিক্রিও কম। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক কুমাররা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আগে যে মাটি এক হাজার টাকায় কিনতো বর্তমানে সেই মাটির ও জ্বালানির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। শুধু বাড়েনি কুমোরদের পারিশ্রমিক। এখন আমাদের টিকে থাকার আর কোনো রাস্তা নেই। এই কাজে হাড়ভাঙা খাটুনি অথচ আয় নাম মাত্র। খরচ বাদ দিয়ে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়ে খেয়েপরে কোনোরকম বেঁচে আছি। পরবর্তী বংশধরদের জন্য যে কিছু রেখে যাব, সে ব্যবস্থাও নেই আমাদের। সন্তানরা এখন শিক্ষিত হয়ে এ পেশাকে পরিবর্তন করে জড়িয়ে যাচ্ছে অন্য পেশায়।