ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যশোরে সরিষার ফলন নিয়ে শঙ্কায় চাষি

যশোরে সরিষার ফলন নিয়ে শঙ্কায় চাষি

মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ ফুল। ফুলে উড়ে মধু আহরণ করছে মৌমাছি। কিন্তু গত কয়েক মৌসুমের চেয়ে এবার খেতে মৌমাছি আসছে কম। এতে সরিষার আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কায় কৃষক। তবে, আশঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার। তার মতে, মৌমাছি ছাড়াও প্রায় ১০০ প্রজাতির পতঙ্গ প্রকৃতিতে রয়েছে, যারা পরাগায়ন ঘটায়। এছাড়া বায়ুর মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে থাকে। সবমিলিয়ে এবার যশোরে উৎপাদন কমবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্য অনুযায়ী, মৌমাছির মাধ্যমে সফল পরাগায়ন সম্ভব এটি সর্বজনস্বীকৃত। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমে ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। বিভিন্ন মধুফুল মৌসুমে মৌমাছি দ্বারা পরাগায়িত ফসলের ১০ থেকে ১৫ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা বলছেন, গতবার ফলন ভালো ছিল, সেকারণে এবার সরিষায় আগ্রহ বেশি চাষিদের। কিন্তু বৃষ্টির ফলে মাঠ ভেজা থাকায় সরিষা গাছের বেশ ক্ষতি হয়। কিছু গাছে ফুল থাকলেও মৌমাছি আসছে না আগের মতো। মৌমাছির অনুপস্থিতি পরাগায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, ফলে উৎপাদনও কমে যায়। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম। এবার ৩৫ কাঠা জমিতে তিনি সরিষার আবাদ করেছেন। বললেন, সরিষা গাছের অবস্থা বেশ খারাপ। মনের দুঃখে খেতেও যাচ্ছি না। এবার মৌসুমের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টিতে সরিষাগাছগুলোর বেশ ক্ষতি হয়। গাছগুলোর বেশিরভাগই নেতিয়ে পড়েছে। তারপরও কিছু ছিল। দুইদিন কুয়াশার পর দেখি, আবারও কাহিল। এবার বিঘা প্রতি প্রায় ৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে এবার মৌমাছির আনাগোনাও দেখছি না।

সদর উপজেলার ইছালি ইউনিয়নের শুড়ো গ্রামের প্রকাশ বিশ্বাস ২৫ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গতবারও করেছিলেন। এবার ফসলের উৎপাদন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন। কারণ হিসেবে জানান, শেষসময়ে তুমুল বৃষ্টি আর মাঠে মৌমাছির আগমন খুবই কম। সার, বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করে খরচ প্রায় ৪ হাজার টাকা হয়েছে। মাঠের যে অবস্থা, সরিষা না আনা পর্যন্ত বলতে পারছেন না তিনি। মণিরামপুর উপজেলার দোনার গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে বারি সরিষা-১৮ জাতের চাষ করে ফলন হয়েছিল ২২ মণ। এবার দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছি, সরিষার অবস্থা খুব ভালো না। অর্ধেক গাছের ফুল পড়ে গেছে। সেখানে এখন ফল দানা বাধতে শুরু হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে মৌমাছি নেই। এই সময় হাজার হাজার মৌমাছিতে খেত ভরে যায়। কিন্তু এবার পুরো খেতে অল্প কিছু মৌমাছি। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া গত তিন রবি মৌসুমে সরিষা চাষের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জেলায় গত তিন রবি মৌসুমে সরিষার চাষ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১-২২ রবি মৌসুমে জেলায় সরিষা চাষ হয় ১৫ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে। গত ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে চাষ হয়েছিল ২৪ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। চলতি রবি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে।

গত বছরের চেয়ে এবার ৭ হাজার ২৭৮ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সূত্র জানায়, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয়- জেলায় এই দুই ধরনের জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে টরি-৭, টরি-১০, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭,বারি সরিষা-১৮ ও বিনা সরিষা-৯ জাতের সরিষা চাষ বেশি জমিতে হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে আছে। রোগবালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম। তবে এবার মৌমাছি কম দেখা যাচ্ছে। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। তিনি বলেন, পরাগায়ন শুধু মৌমাছি দিয়ে হবে- তা নয়, ১০০ প্রজাতির কীটপতঙ্গ ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। বাতাসও ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। তবে মৌমাছি পরাগায়ন ঘটালে ফলন ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মৌমাছির সংখ্যা কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরিষার পর পরই মৌমাছি কালোজিরার ফুলের সন্ধানে চলে যায়। ফরিদপুরে কালোজিরা চাষ এবং সেখানে মৌমাছির অভয়ারণ্য রয়েছে। মৌমাছি থাকলে যেমন পরাগায়ন এবং ফলন বাড়ে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে মধুও পেয়ে থাকেন কৃষক। সেইটাও লাভের বিষয় বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত