ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গারো পাহাড়ে মিলছে খেজুরের রস

গারো পাহাড়ে মিলছে খেজুরের রস

গারো পাহাড়ের জেলা শেরপুরে খেজুরের চাষ খুব একটা হয় না। ফলে খেজুরের রসও এখানে দুর্লভ। কিন্তু গত তিন বছর ধরে মিলছে খেজুরের রস। আর এই রস পান করতে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরেই ভোজন রসিকরা ভিড় জমাচ্ছেন পাহাড়ি এলাকায়। জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা যাওয়ার পথে সড়কের দু’ধারে দেখা মিলবে এসব খেজুর গাছের সারি।

পরিচর্যার ফলে ওই গাছগুলোতে মিলছে রস। রসের খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলাজুড়ে। ফলে টাটকা খেজুরের রস পান করতে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরেই রসিক পিপাসুরা ছুটে আসছেন পাহাড়ি এই এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, খেজুর গাছগুলো অনেক বছর যত্নের অভাবে পড়েছিল। যদিও কয়েক বছর ধরে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এই পরিচর্যার ফলেই রস এসেছে। এছাড়াও নন্নী এলাকার আরো বেশ কিছু বাড়িতে খেজুর গাছ থেকে রস নামানো হচ্ছে বলে জানান তারা। খেজুরের রস পান করতে গত এক সপ্তাহ ধরে ভোর থেকে ভিড় করছেন সৌখিন পিপাসুরা। সম্প্রতি ভোরে মধুটিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভোর হওয়ার আগেই রস পিপাসুরা এসেছেন খেজুরের টাটকা মিষ্টি রস পান করতে। আর এসব রস মাত্র ঘন্টাখানেকের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

কথা বলে জানা যায়, যারা এসেছে বেশিরভাগই শেরপুর শহরের তরুণ-তরুণী। গাছি আকবর আলী বলেন, এখানে সড়কের ধারে বেশ কিছু খেজুরগাছ রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলো থেকে রস নামানো যায় না। তেমন একটা লাভ না হলেও এটা একটা সৌখিনতা। দূর-দূরান্ত হতে লোকজন আসে, ভালো লাগে। ভোরে এলাকায় একটা হাট-বাজারের মতো জমজমাট হয়ে যায়। নিপা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে এ গাছি বলেন, আমরা নিপা ভাইরাস সম্পর্কেও অবগত আছি। তাই রস সংগ্রহের পাত্র যতোটা সম্ভব নেট দিয়ে ঢেকে রাখি এবং রাতে পাহারার ব্যবস্থা করি। পান করার পরিমাণ সম্পর্কে এ পুষ্টিবিদ বলেন, একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। তবে এক গ্লাস খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস কিংবা কিডনি রোগীদের খেজুরের রস না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কাঁচা রস পানে কি কি ক্ষতি হতে পারে জানিয়ে তাসলিমা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস পানে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ২০২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ জনের ১০ জনই মারা গেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। এ রসে নিপা ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে। নিপা ভাইরাস এক ধরনের ‘জুনোটিক ভাইরাস’, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। বিশেষ করে নিশাচর প্রাণী বাদুড় বেশি ছড়ায়।

আর খেজুরের রসে রাতে বাদুড় বসে। রস খাওয়ার সময় বাদুড় ভাইরাস ছড়ায়। এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। খেজুরের রস পান করা নিয়ে এ পুষ্টিবিদের পরামর্শ হচ্ছে, রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন বা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। তবে রস যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণু থাকতে পারে। এটা অস্বাস্থ্যকর। এ জন্য রস হালকা আঁচ দিয়ে বা ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়া ভালো। এ ছাড়া রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে খেতে পারেন। ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, শেরপুর অঞ্চলের কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রবণতা কম। সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বেশি খেজুরের চাষ করেন। পর্যাপ্ত রোদ, কম আর্দ্রতা, কম বৃষ্টিপাত এবং উষ্ণ আবহাওয়ায় চাষের জন্য উপযোগী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত