নওগাঁয় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বেড়েছে সরিষা চাষ

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

সরিষা ফুলের হলুদ হাসিতে রঙিন হয়েছে নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। জেলার মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ি হাটের পর নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশে এভাবে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা মিলবে হলুদের। সরিষার ফুল যেন দিগদিগন্ত রাঙিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন উপজেলার ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে সবুজের বুকে এ যেন কাঁচা হলুদের আলপনা। যত দূর চোখ যায় যেন সরিষা হলুদ ফুলের মাখামাখি। যেখানে প্রকৃতি সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যের নান্দনিকতায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রণোদনা, আমদানিনির্ভরতা কমানো, ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ এবং দাম ভালো পাওয়ায় বেড়েছে সরিষা চাষ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার টন সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় ৩৩ হাজার ৮০০ জন কৃষককে উন্নত জাতের ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উন্নত বারি-১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮ এবং বিনা-৪, ৯ টরি-৭ সরিষা চাষ করা হয়েছে। গত বছর ৪৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। খরচ কম এবং লোকসানের ঝুঁকি কম থাকায় বাড়ছে সরিষা চাষ। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার আবাদের জমি বেড়েছে। চাষিরা বলছেন- প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে হালচাষ, পানি সেচ, সার, ওষুধ ও শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়ে ৩-৪ হাজার টাকা। যেখানে ফলন হয় ৫-৬ মণ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা চাষিদের। সরিষা আবাদে একটি সেচ দিতে হয়। যেখানে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে অন্তত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সরিষা রোপণে গাছ বড় হওয়ার পরই বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের সেচ খরচ বেঁচেছে অন্তত ২১ কোটি টাকা। মান্দা উপজেলার কালিগ্রাম গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন- চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ৬ মণ ফলনের আশা। সরিষা তুলে ওই জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। গত বছর প্রতিমণ সরিষা ৩ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। তবে সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো আবাদ করায় পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ হবে না। পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদাও পূরণ হয়। এ বছরই ভালো দাম পাওয়ার আশা। কালিকগ্রাম গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন- দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরিষা চাষে একটি সেচ দিতে। যেখানে খচর পড়ে অন্তত ১২০০ টাকা। সরিষা রোপণে গাছ বড় হওয়ার পরই বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বাড়তি সেচ দিতে হয়নি। ফলে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো বেঁচে গেছি।

রানীনগ উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন- দেড় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এরমধ্যে এক বিঘা জমির জন্য কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা পেয়েছি বীজ ও সার। এতে আমার প্রায় ৬০০ টাকার বেঁচে গেছি। আমার মতো অনেক কৃষক প্রণোদনা পাওয়ায় এবছর ব্যাপক পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছ ভালো আছে। আশা করছি ফলনও ভালো পাব। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে। দলীয় আলোচনা ও মাঠ দিবসসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচার করে সরিষা চাষ করার জন্য কৃষকদের শুরু থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে ৩৩ হাজার ৮০০ জন কৃষককে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।