হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঢেঁকি

বর্তমানে ধান ভাঙার নতুন যান্ত্রিক মেশিন আবির্ভাব হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কেশবপুর প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে ঢেঁকির শব্দে এখন আর ঘুম ভাঙে না কারও। অগ্রানেরি সাত সকালে ভাঙে সবার ঘুম, কাচতে হাতে কৃষাণ ছুটে ফসল কাটার ধুম, আহরে খুশি খুশি মন, নবান্নেতে রইল বন্ধু তার নিমন্ত্রণ। কবির এই কবিতায় মনে পড়ে গেল আজ নবান্ন। পঞ্জিকা মতে ১ অগ্রহায়ণ।

গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে ঢেঁকিতে চাল ভেঙে আটা করে চলতো নবান্নের উৎসব। আগের দিনে গ্রামের মানুষ ঢেঁকিতে ধান ভানতো এবং চাল থেকে আটা করে কুলি পিঠা, ভাবা পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। আর আত্মীয়স্বজন এলে তো আর কথায় নেই। গ্রামে গেলে শোনা যেত সেই ঢেঁকিতে ধান ভাঙার শব্দ। আজ সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে ঢেঁকি দেখা যায়। এক সময় যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভাঙার প্রচলন ছিল। সে সময় পরিবারের গৃহিণীরা ধান চাল ভাঙার কাজ ঢেঁকিতেই করত। মুসলমানদের ঈদ পরব আর হিন্দুদের পুজা পার্বণ নবান্ন উৎসব পৌষের পুলি পিঠা ভাপা ও নারিকেল পিঠাসহ হরেক রকমের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতে নারীদের ঢেঁকিতে ধান চাল ভাঙার কলরবে চারিদিকে যেন হৈচৈ পড়ে যেত। আগের দিনে গরিব পরিবারের মানুষ ধান চাল আটা ভাঙার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত, আবার কেউ কেউ ঢেঁকি ভাঙানো চাউল বাজারে বিক্রি করত।

এই ঢেঁকি ভাঙানো চাল মানুষের খুবই পছন্দনীয় ছিল কদরও ছিল বেশ। বর্তমানে ধান ভাঙার নতুন যান্ত্রিক মেশিন আবির্ভাব হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। গ্রামের কিছু প্রবীণ লোকের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, এই অঞ্চলে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভাঙার ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিভিন্ন উৎসবের সময় প্রতিটি বাড়িতে নুতন বউ-জামাই মেয়ে আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে বাড়িতে পূর্ণ হতো আনন্দমুখর পরিবেশে। শেষ রাতে বাড়িতে নারীদের ঢেঁকিতে গুঁড়া তৈরি, ধান, চাল ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যেত। আজ আর সেই শব্দ শোনা যায় না। বিশেষ করে এই এলাকায় শীতের এ মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরির উৎসব শুরু হয়। চিতই পিঠা ঢেঁকি ভাঙানো গুঁড়া ছাড়া জমেই না।