শুকনো মৌসুমের আগেই পানিশূন্য তিস্তা

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পারভেজ উজ্জ্বল, নীলফামারী

এখনো শুকনো মৌসুম আসতে অনেক বাকি অথচ তার আগেই খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন পানিশূন্য হয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। যে তিস্তা নদীকে নিয়ে গাথা আছে নানান রকম ভাওয়াইয়া গান, বাড়িতে নতুন জামাই এলে বা নতুন আত্মীয়-স্বজন এলে তিস্তার বৈরালী মাছ ছিল খাবারের প্রধান আকর্ষণ, আজ সেই নদীর বুকে চর জেগে উঠেছে আর চলছে চাষাবাদ। সেই কারণে নদীনির্ভর জেলেরা আজ বেকার। বর্তমানে ভারতের গজল ডোবায় তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানিশূন্য হয়ে যত্রতত্র চর জেগে জমিনে পরিণত, তাই প্রমত্তা তিস্তা এখন শুধুই ধু-ধু বালুচর। তিস্তা তীরবর্তী মানুষদের নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষার সময় ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ায় নদীর দু’পারের মানুষের জমি, ঘরবাড়ি ভেঙে সর্বস্বান্ত করে দেয়। খরা মৌসুমে পানির অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারে না নদী তীরের মানুষ। এক সময় সরাসরি নৌকা মাল বোঝাই করে পাল তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত, বর্তমানে সেগুলো কল্পকাহিনীর মতো। নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ। এ ছাড়াও সরকারের নদী শাসনের পরিকল্পিত পরিকল্পনার অভাবে নদীর মাঝখান উঁচু হয়ে পানি দু’পারে প্লাবিত হয়। নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ আদৌ হয়েছে কি না তা এই এলাকার মানুষ জানে না বলে প্রতিবেদককে জানান। নদী ড্রেজিং করে নদীর পানির গতিপথ সচল করলে একদিকে যেমন নদী ভাঙন কমে যাবে, অন্যদিকে কৃষক নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ চালাতে পারবে, এর ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কৃষক লুৎফর রহমান, আছেম আলী ও রমানাথ রায়। তিস্তা নদীর এই করুণ দশার জন্য দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকা পানি চুক্তিকে দায়ী করেছেন তিস্তাপাড়ের জেলে-কৃষক পরিবারগুলো। সমগ্র তিস্তাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ নদনদী শাখা-প্রশাখা খাল, বিলগুলো এবং জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় অযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে তিস্তা ও আশপাশের এলাকা। নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলা তিস্তানির্ভর। তিস্তা পাড়ের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ খান বলেন, তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত একতরফাভাবে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্ষা শেষ হতেই, তিস্তার আশপাশের এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের আশপাশের এলাকা। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জের তিস্তা পাড়ের বদিয়ার খাঁ বলেন, তিস্তা ব্যারেজের মূল গেটগুলোতে সামান্য পানি প্রবাহ রয়েছে, বাকি পুরো তিস্তা নদী বালুচরে পরিণত হয়েছে। এ কারণে অনেক মাঝিরা বেকারত্বে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে। নীলফামারীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবু সাইদ বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলের এ জেলার দুই পাশে দুটি বড় নদী তিস্তা এবং ধরলা প্রবাহিত। উন্মুক্ত জলাশয়, তিস্তা নদী এবং ধরলা নদীতে মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করে মাছের উৎপাদন করা হয়। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে থাকি। কিন্তু জেলেরা আগের মতো মাছ ধরতে পারছে না। যদি তিস্তায় খনন এবং মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে জেলেদের যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফা উদ্দৌলা প্রিন্স আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নদীতে এখন পানি অনেক কমে গেছে, পানির প্রবাহ না থাকায় গেট বন্ধ রয়েছে, সেকারণে অনেকটা পানিশূন্য তিস্তা।