নির্বিচারে চলছে পাথর উত্তোলন

হুমকিতে পঞ্চগড়ের ডাহুক নদী

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিধিনিষেধ অমান্য করেই ডাহুক নদীতে নির্বিচারে চলছে পাথর উত্তোলন। এতে করে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ নদীটি। গতিপথ হারিয়ে ক্রমাগতভাবে হারাচ্ছে চিরচেনা রূপ। এক সময় অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিনের পাথর তোলার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে নদীটি। ড্রেজারের পর এখন অভিনব পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে তোলা হচ্ছে নদীর বুক চিরে পাথর। পাথর খেকোদের অত্যাচারে হারিয়ে যেতে বসেছে ডাহুক নদী।

জানা যায়, ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ফের ভারতে ঢুকে গেছে ডাহুক। এর পশ্চিমে শালবাহান ইউনিয়ন ও পূর্বে রয়েছে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন। দুটি ইউনিয়নের নদী ও নদীর ধারে কাছে রয়েছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। চা-বাগান থেকে শুরু করে আমসহ নানা ফল ও ফসলের বাগান। গত রোববার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লোহাকাচি-বালাবাড়ী ডাহুকের বুক চিরে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। একটি ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তুলতে ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। এভাবেই ডাহুক নদীর শালবাহান মাঝিপাড়া, কালিতলা, লোহাকাচী, বালাবাড়ী, বুড়াবুড়ির কাটাপাড়া, সরকারপাড়া ও হারাদীঘি এলাকায় নদীতে পাওয়ার ট্রাক্টর দিয়ে পাথর তোলার খবর পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাহুক নদীতে প্রতিদিন নির্বিচারে তোলা হচ্ছে পাথর। ড্রেজার মেশিনের সময় থেকেই নদীটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এখন ড্রেজার মেশিনের পর অভিনব পদ্ধতি হিসেবে ট্রাক্টরের ইঞ্জিনের সাহায্যে নদীর গভীর থেকে তোলা হচ্ছে হাজার হাজার সিএফটি পাথর। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক্টর দিয়ে তোলা হচ্ছে পাথর। রয়েছে ৮০ থেকে ১০০টি সাইট।

এসব সাইট নিয়ন্ত্রণ করে পাথর তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিও। কারা কারা এসব সাইট চালাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শ্রমিক জানান, আমরা শুধু পাথর তোলার কাজ করি। এসব সাইট চালানোর মহাজন রয়েছে। যেমন উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের আগা শালবাহানের আনিছুর, সানু বালাবাড়ী এলাকার আবু, আহাদ, জুয়েল, জাকের, পলাশ ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মান্দুলপাড়া এলাকার মনছুরগং, বন্দিভিটা গ্রামের মোতালেব ওরফে মোতা, সর্দারগছ এলাকার জিয়ারুল, আলমগীর ও আহসান ও লোহাকাচী গ্রামের আব্দুল জলিল। আব্দুল জলিল নামের একজন সিন্ডিকেট ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে প্রত্যেক পাথর সাইট থেকে হাজার হাজার টাকা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। সে টাকা সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। কয়েক দিন আগে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারে একটি বিকাশের দোকান থেকে ম্যানেজ করার নামে টাকা পাঠাতে দেখা যায় আব্দুল জলিলকে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল জলিল জানান, আমি কোনো চাঁদা নিই না। মালিকানা জমিতে পাথর উত্তোলন করছি। পলাশের সঙ্গে মুঠোফোনে বিষয়টির ব্যাপারে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। পাথর শ্রমিকরা বলেছেন, ডাহুকে হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। তবে তারা স্বীকার করছেন, অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ডাহুকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা হতে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখের গেজেট প্রকাশের পর বাংলা ১৪২৬ সন হতে সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডাহুক নদীর পাথর মহাল ইজারা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সরকারি সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে শ্রমিক নামিয়ে পাথর উত্তোলন করেই চলছে। এতে করে সরকার যেমন হারাচ্ছেন রাজস্ব, তেমনি অপরিকল্পিতভাবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে এ নদী। শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার কিছু ট্রাক্টর আছে। তা দিয়ে পাথর লোড-আনলোড হয় সত্য। তবে এ অঞ্চলের শতশত শ্রমিক সাধারণভাবে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ পাথরের ওপরেই তাদের জীবন জীবিকা। তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় জানান, আমি এ থানায় কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। কোথায় পাথর উত্তোলন হচ্ছে তা নিয়ে খোজ নেয়া হচ্ছে। তবে ট্রাক্টর দিয়ে পাথর উত্তোলন কারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যাতে কোনোভাবেই ডাহুক নদীতে এ ধরনের ট্রাক্টর দিয়ে কেউ পাথর তুলতে না পারে। এর আগেও ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।