ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষাবাদ

খরচ কম, অধিক লাভ
সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষাবাদ

কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় নিয়ে আসতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাসহ প্রতিনিয়ত কৃষিকাজকে সহজ ও সাশ্রয়ী করতে কৃষকদের হাতের নাগালে নিয়ে আসছে আধুনিক পদ্ধতির বিভিন্ন সরঞ্জাম। এসবের মধ্যে অন্যতম ধানের চারা রোপণের মেশিন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। যান্ত্রিক এই মেশিনটির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষাবাদে কৃষকের সময়, শ্রম ও আর্থিক খরচ কমিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষাবাদ করে অধিক লাভবান হবেন কৃষক। গত মঙ্গলবার শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কৃষকরা সমলয় পদ্ধতিতে হাইব্রিড বোরো ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন। এর আগে শরীয়তপুর সদর উপজেলার কৃষকরা একই পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে হাইব্রিড বোরো ধান আবাদ করেছেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি হিসেবে শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের দেওভোগ গ্রামের ৫০ একর জমিতে ৮৫ জন কৃষক ও গোসাইরহাট উপজেলার নলমুড়ি ইউনিয়নের পাঁচকাঠি গ্রামের ৫০ একর জমিতে ৮৫ জন কৃষক সমলয় পদ্ধতিতে হাইব্রিড বোরো ধানের আবাদ করছেন। এবছর শরীয়তপুর জেলার কৃষকরা মোট ১০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের আবাদ করবেন। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ দিন বয়সি চারা রোপণ করা সম্ভব হয়। ফলে কৃষকের সময় বেঁচে যায়। এছাড়াও পরিশ্রমও খরচ কম হয়। কৃষি বিভাগ কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনার মাধ্যমে প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেছে। ধান কাটার সময়ও কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দিও যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় করা হবে। সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদের এই আধুনিক পদ্ধতি কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে। পাঁচকাঠি এলাকার কৃষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করতে গিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ২০ মিনিটে ৩০ শতাংশ জমির চারা রোপণ হয়ে গেছে। যা খুবই আনন্দের খবর। কেননা এখন ধান রোপণ, ধান কাটা, মাড়াইসহ ইত্যাদি কাজে শ্রমিক তো পাওয়াই যায় না। অন্যদিকে পুরোনো পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করতে সময়, আর্থিক ব্যয় ও পরিশ্রম বেশি হতো। এভাবে চাষাবাদ করতে পারলে কৃষকের সুখের দিন আসতে বেশি সময় লাগবে না। পাঁচকাঠি এলাকার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের পরিচালক মো. আলমাস বলেন, প্রতি একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে সাড়ে ৩ লিটার জ্বালানি খরচ হয়। সময়ও পুরোনো পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম লাগে। প্রতি একর জমিতে চারা রোপণ করতে আমরা কৃষকদের থেকে ৩ হাজার টাকা নেই।

গোসাইরহাট উপজেলার কৃষি অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা কৃষকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা এখন সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো আবাদ করতে অনেক বেশি আগ্রহ হলেও সীমাবদ্ধতার কারণে সবাইকে সুযোগ দিতে পারছি না। গোসাইরহাটে এবছর ৫০ একর জমির জন্য সাড়ে ৪ হাজার ট্রে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এসব জমির চারা কর্মসূচির অর্থায়নে রোপণ ও মৌসুম শেষে জমির ধান কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে সার্বিক কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষককে স্বাবলম্বী করতে সরকার কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে আমরা জেলায় সমলয় পদ্ধতি সম্প্রসারণ করতে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এই পদ্ধতিতে আবাদ করলে চারা রোপণে কৃষকের সময় সাশ্রয় হবে, শ্রম কম লাগবে, উৎপাদন ব্যয় কমবে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। এছাড়াও এক ফসলি জমি দুই ফসলি, দুই ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে। অর্থনৈতিকভাবে কৃষক লাভবান হবে, দেশের উৎপাদন ঘাটতি কমবে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, কৃষকের জন্য ও দেশের জন্য কৃষিকে লাভজনক করতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা অত্যাবশ্যকীয়। কৃষক স্বাবলম্বী হলে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে দেশ। আমরা যান্ত্রিক এই প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে দিতে সবাই মিলেমিশে কাজ করব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত