মৌমাছির আনাগোনা কম

সরিষার ফলন নিয়ে শঙ্কায় যশোরের চাষিরা

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যশোর জেলায় গত বছর সরিষার ফলন ভালো হলেও এ বছর ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি এবং মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরিষার ফলন নিয়ে চিন্তিত অনেকে। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গত তিন রবি মৌসুমে সরিষার চাষ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১-২২ রবি মৌসুমে জেলায় সরিষা চাষ হয় ১৫ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে। গত ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে চাষ হয়েছিল ২৪ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। চলতি রবি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবার ৭ হাজার ২৭৮ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। জেলায় উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ও স্থানীয় এই দুই ধরনের জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টরি-৭, টরি-১০, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭,বারি সরিষা-১৮ ও বিনা সরিষা-৯ জাতের সরিষা চাষ বেশি পরিমাণের জমিতে হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, প্রতিকূল আবহাওয়া ও মৌমাছির আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্ষতির শঙ্কায় ভুগছেন তারা। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি ফলন ভালো হয়েছে এবং আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, গতবার ফলন ভালো হয়েছিল, সেকারণে এবার বেশি চাষ করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির ফলে মাঠ ভেজা থাকায় সরিষা গাছের বেশ ক্ষতি হয়। যদিও কিছু গাছে ফুল আছে, কিন্তু আগের মতো মৌমাছি আসছে না। মৌমাছি ছাড়া পরাগায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, ফলে উৎপাদনও কমে গেছে বলে দাবি কৃষকদের। মনিরামপুর উপজেলার জামজামি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিবছর সাথী ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করি। এবছরও করেছি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। পরাগায়নে বিঘ্ন হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক রুবেল হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। লাভের আশা করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। মৌমাছি খেতে আসছে না, ফলে পরাগয়ন হচ্ছে না। বিশেষ করে এবছর অসময়ে বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। একলাস শেখ দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলেন। লোকসান দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, শুনেছি কৃষি অফিসাররা বলছে ফলন ভালো হয়েছে। তারা কি খেতে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে? আমরা চাষ করে লোকসান গুণি। আমরা এ বছর কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাইনি। বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম। এবার ৩৫ কাঠা জমিতে তিনি সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, সরিষা গাছের অবস্থা বেশ খারাপ। মনের দুঃখে খেতেও যাচ্ছি না। এবার মওসুমের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টিতে সরিষা গাছগুলোর বেশ ক্ষতি হয়। লক লক করে ওঠা গাছগুলোর বেশিরভাগই নেতিয়ে পড়েছে। তারপরও কিছু ছিল। দুইদিন কুয়াশার পর দেখি, আবারও কাহিল। এবার বিঘা প্রতি প্রায় ৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বৃষ্টির পর এবার মৌমাছির আনাগোনাও দেখছি না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে আছে। রোগবালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম। তবে এবার মৌমাছি কম দেখা যাচ্ছে। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। পরাগায়ন শুধু মৌমাছি দিয়ে হবে তা নয়, ১০০ প্রজাতির কীটপতঙ্গ ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। বাতাসও ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। তবে মৌমাছি পরাগায়ন ঘটালে ফলন ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মৌমাছির সংখ্যা কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরিষার পর পরই মৌমাছি কালোজিরার ফুলের সন্ধানে চলে যায়। ফরিদপুরে কালোজিরা চাষ এবং সেখানে মৌমাছির অভয়রাণ্য রয়েছে। মৌমাছির থাকলে যেমন পরাগায়ন এবং ফলন বাড়ে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে মধুও পেয়ে থাকেন কৃষক। সেইটাও লাভের বিষয় বলে তিনি জানান।