সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আবাদি জমিতে এবারো সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন হলুদের সমারহ। সরিষা চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্চার কারণে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঘ মাসের শুরুতে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষার উৎপাদন খরচ কম। এ কারনে গত কয়েক বছর ধরে বাজারে সরিষার ভালো দাম থাকায় চাষিরা দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলায় ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত ছয়টি জাতের সরিষা আবাদ করে থাকে। সেগুলো হচ্ছে উচ্চফলনশীল বিনা সরিষা ৪, বিনা-৯, বিনা-১১, সরিষা বারী-৯, বারী-১৪, বারী-১৫, বারী-১৭, বারী-১৮, বুলেট, টরি-৭ ও পাঞ্জাবজটা জাতের সরিষা। উপজেলার বাঘুটিয়া, শ্রীধরপুর, ধোপাদী, সিরাজকাটি ও প্রেমবাগ এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, ফসলের মাঠগুলো সরিষা ফুলের হলুদ রঙে অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। দিগন্তজোড়া মাঠে কেবল হলুদের সমাহার। চোখ জোড়ানো নয়নাভিরাম এ দৃশ্যভ্রম হতে পারে যে প্রকৃতির গায়ে কে যেন হলুদ চাদর জড়িয়ে দিয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠার পরেও, প্রতিকূল আবহাওয়াও প্রকৃতিক দুর্যোগে নাস্তানাবুদ ছিল স্থানীয় কৃষকরা। গত বছরের ন্যায় এবারও সরিষা চাষিরা দুরাশার মেঘ সরিয়ে চোখে মুখে হাসি ফুঁটিয়েছে। উপজেলা কৃষিবিভাগ এবারো সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন। সেই সঙ্গে আশায় বুক বেঁধেছেন চাষিরা। অনুকুল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের প্রণোদনা ও তদারকি এবং কৃষকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় সরিষা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের হাসির সঙ্গে কৃষকের হাসি যেন একাকার হয়ে আছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ করেছেন চাষিরা। যা এর আগেও সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ১১০ মেট্রিক টন। উপজেলার সবুজবাগ গ্রামের সরিষা চাষি কামাল হোসেন জানান, এবার সরকারি সাহায্য সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আশা করছেন এবার বাম্পার ফলন পাবেন। সিরাজকাটি গ্রামের সরিষা চাষি মোজাফফার হোসেন বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার ফলন অনেক বেশি। দামটাও ভালো পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা তার। ব্লক সুপারভাইজার দিপক কুমার পাল বলেন, গত মৌসুমে এ ব্লকে ২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল।

এবার বাড়িয়ে ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হচ্ছে। চাষিরা এখন সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, এ উপজেলায় গত বছরে আবাদি জমি ছিল ১২০০ হেক্টর। সেখানে এবার চলতি বছরে আবাদি এরিয়া দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১০ হেক্টর। বারী সরিষা যে জাত আছে। সেটাতে তেলের পার্সেন্ট বেশি। এই বারী সরিষা জাতটি কৃষকরা রোপণ করছেন বেশি। বিগত বছরে ছিল ৬৮৫ হেক্টর। বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর। ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে সরকারি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। তেলজাতী উৎপাদন আমরা দ্বিগুণ করব। ফলে এবার অভয়নগরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরিষার রেকর্ড আবাদ হয়েছে। ফলনও রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছি।