শীতে অসহায় হতদরিদ মানুষ

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

সর্বউত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে হাঁড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে ঘন কুয়াশার পাশাপাশি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীতে কাঁপছে জেলার লাখ লাখ মানুষ। প্রচণ্ড শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, কোল্ড এলার্জি ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সব চেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তা-ধরলাপাড়ের মানুষ। রক্ষা পেতে কোনো ধরনের শীতবস্ত্র নেই এখানকার বেশিরভাগ দরিদ্র শ্রেণির মানুষের। সরকারি-বেসরকারিভাবে গোটা জেলায় এ পর্যন্ত যে পরিমাণ কম্বল ও গরম বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কয়েকদিন পর মাঘ মাসের শুরু থেকে আরো বেশি পরিমাণে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তাই সমাজের বিত্তবানসহ প্রশাসনের কাছে শীত বস্ত্র প্রদানের দাবি জানিয়েছে এখানকার দরিদ্র পরিবারের ভুক্তভোগীরা।  চতুর্দিকে তিস্তা ও ধরলা নদী পরিবেস্টিত লালমনিরহাট জেলায় শীত মৌসুমে এখানে শীতের তীব্রতা থাকে, অন্য যে কোনো জেলার চেয়ে বেশি। বিগত বছরের তুলনায এবার অনেক আগে থেকেই শীত জেঁকে বসেছে। স্থলবাগের তুলনায় এই শীতে চরাঞ্চলগুলোর মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জনবসতিপূর্ণ এসব চরের প্রায় প্রায় শতভাগ মানুষই শীতবস্ত্রহীন। এসব এলাকার মানুষের শীত নিবারনের অবলম্বন বলতে ধানের খড় কুটোর আগুনের তাপ। শীত নিবারন হয় না বলে চরের ভূমিহীনরা ঘরের দুয়ারে খড়-গোবরের মুঠিয়া জ্বালিয়ে রাখেন সারারাত। রাতে দুই কাঁথায় শীত কাটে না। ছেলেমেয়েদের পরনে গরম কাপড় নেই। একদিকে অভাব অনটন, অন্যদিকে শীত বস্ত্রহীন দিনরাত অতিবাহিত করছে মানুষ। তীব্র শীত ও কুয়াশায় মানুষের হাঁচি, কাশি, সর্দি জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। গবাদি পশু-পাখিও প্রচণ্ড শীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক স্থানে গবাদি পশুর বাচ্চা মরে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের তীব্রতা সহ্যের বাইরে। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার যানবাহন ও নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতার্ত মানুষের এহেন দুর্ভোগ লাগবে সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনকে আরো বেশি এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ছিন্নমূল মানুষদের শীত নিবারণের জন্য এরই মধ্যে পাঁচ উপজেলাতে ২৪ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ চলছে। শিশুদের জন্য ৫০ হাজার পিস জ্যাকেট ও সোয়েটারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে তা শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।