এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদী এখন ফসলের মাঠ

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এক সময় ছিল খরস্রোতা নদী। তবে বর্তমানে লাঙ্গল নিয়ে হাল চাষে কৃষকের কর্মব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই এটিই সেই বড়াল নদী। কালের বিবর্তনে দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে পদ্মার অন্যতম শাখা নদী এই বড়াল। নানা কারণে নাব্য হারিয়ে বড়াল এখন পরিণত হয়েছে কৃষকের ফসলের মাঠে।

নদীর বুকজুড়ে চাষ হচ্ছে ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল। চাষাবাদের সুবিধার্থে নদীর উঁচু স্থান থেকে মাটি কেটে সমান করছেন কৃষকরা। ফলে বদলে যাচ্ছে নদীর প্রাকৃতিক গঠন। আর নদীতে ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে নদীতে চাষ করার ফলে সেই মাটি বর্ষা মৌসুমে নদীর তলায় জমে নদীর গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে। নদী পাড়ের মানুষের দাবি- অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ বড়ালের নাব্য সংকটের জন্য অন্যতম প্রধান কারণ। বড়ালের উৎপত্তি রাজশাহীর চারঘাট থেকে পদ্মা নদীর শাখা হিসেবে। চারঘাট থেকে বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে এ নদী হুড়া সাগরে মিশে নাকালিয়া এলাকায় যমুনা নদীতে পড়েছে। বড়াল নদী রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের আটটি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার বুক চিরে রয়েছে বড়ালের প্রায় ২২ কিলোমিটার নদী পথ। নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করা, পানি সংরক্ষণ এবং সেচসুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বড়ালের উৎসস্থলে একটি স্লুইসগেট ও ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে নাটোরের আটঘড়িয়া এলাকায় আরেকটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়।

এর মাধ্যমেই বাধাপ্রাপ্ত হয় বড়ালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। নদীতে পানি না থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে একসময় এ নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেরা। স্থানীয় জেলে পিন্টু হালদার জানান তার দুর্দশার কথা। তিনি বলেন, পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই নদীতে মাছ ধরে তাদের জীবিকা চলে। নদীতে স্লুইসগেট নির্মাণের আগে ইলিশ থেকে শুরু করে সব ধরনের দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। নদীর পানি সংকট দেখা দেওয়ায় এখন মাছের দেখা মিলছে না।

অন্য কাজ না করতে পাড়ায় পূর্বপুরুষদের পেশা ছাড়তে পারছেন না পিন্টু হালদার। ফলে, অর্থাভাবে দিন পার করছেন নদী নির্ভর এই জেলে। বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখইর এলাকার কৃষক জাহেদ মোল্লা বলেন, আগে নদী কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। নদীর আশপাশের কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হতো নদীর পানি। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় জমিতে সেচ দিতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। এছাড়া, নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে নদী পথে পণ্য পরিবহনের পূর্ব অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন এই কৃষক। বড়াল নদী রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও বাগাতিপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী বলেন, দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও বড়াল নদী ধ্বংসের জন্য দায়ি স্লুইসগেটগুলো অপসারণ করা যায়নি। বাগাতিপাড়ার ফুসফুস এই বড়াল নদী। নদী মারা যাওয়ায় চরম বিপর্যয়ে পড়বে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ।

বারবার চেষ্টা করে, নানা দপ্তরে চিঠি দিয়েও নদী রক্ষায় কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখছি না। ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে নদী এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করে খুব সহজেই এই নদী খননের মাধ্যমে এর নাব্য ফেরানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, বড়ালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২০ সালে একটি প্রকল্প দাখিল করে। কিন্তু নানা জটিলতায় আজও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে, সবশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণলয়ে পাঠানো হয়েছে। বড়াল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও জোড়ালো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। পাশাপাশি বড়াল নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি দ্রুতই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।