ঘন কুশায়ায় আলুখেতে পচারি রোগের প্রাদুর্ভাব

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বগুড়ায় ঘন কুশায়ায় আলুখেতে লেটব্লাইট বা পচারি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগের হিসাব মতে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষক চিন্তিত হয়েছে পড়েছেন। জেলার সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এবার সেখানকার কৃষক ১৮ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে চাষ করছেন। আলুর গাছও বেশ তরতরিয়ে বেড়ে উঠছিল। ফলে দাম বৃদ্ধির বছরে খুশির ঝিলিক দেখা দেয় কৃষকের চোখে। তবে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে পচারি রোগ। এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এ রোগ হানা দিয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে বিহার, ধামাহার, গুজিয়া, মোকামতলা, বুড়িগঞ্জ, আটমুল, পৌর এলাকার সুলতানপুর নয়াপাড়া গ্রামের মাঠেই এ রোগেই আক্রান্ত জমির পরিমাণ বেশি। এসব এলাকার কৃষক এখন দিশাহারা। তারা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও রোগ দমন করতে পারছেন না। তাদের মতে কীটনাশকগুলোই ভেজালে ভরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার বগুড়ার ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবার ছিল যা ৫৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর। এই হিসাবে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ বেশি হচ্ছে। শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘড়ি মহল্লার কৃষক ছামসুল আলম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে আলুখেতে। ফলে গাছে পচন ধরেছে। এতে তারা শঙ্কিত। রায়নগর ইউনিয়নের ফাঁসিতলা গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন তিনি। গাছ বেড়ে উঠছিল সুন্দরভাবেই। কিন্তু পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে হঠাৎ পচারি রোগ দেখা দেয়। এরই মধ্যে তার এক বিঘা জমির গাছ মরে গেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কীটনাশক ছিটিয়েও রোগ সারছে না। নুনগোলা ইউনিয়নের কৃষক আকবর আলী বলেন, এরই মধ্যে তার ২৫ থেকে ৩০ শতক জমিতে রোপা আলুগাছে পচন ধরেছে। লেটব্লাইট বা পচারি রোগের কারণেই এমন পরিণতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। প্রতি বছরই এ রোগে কমবেশি ক্ষতি হয়। তবে অন্যান্য বার কীটনাশকে সেরে গেলেও এবার কাজ হচ্ছে না। তার ধারণা, ভেজাল কীটনাশকের কারণে আলুর এ রোগ সারছে না। বগুড়ার সদর উপজেলার পীরগাছা এলাকার কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। তিন দিন পরপর ওষুধ দিচ্ছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন জমি আক্রান্ত হচ্ছে। এই রোগের কারণে ফলনও কম হচ্ছে।’ একই এলাকার কৃষক সালাম শেখ বলেন, এবার আলুর জমিতে পচারি রোগ আক্রমণের পরিমাণ বেশি। ওষুধ স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না। ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধের কারণেও এমন হতে পারে, পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের কাউকে পাওয়া যায় না। কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাও এ দাবির সঙ্গে একমত। তারা বলেছেন, নানা প্রকার কোম্পানি ফসলের রোগ সারাতে কীটনাশক বিক্রি করে। তবে সব কোম্পানির ওষুধ ভালো নয়। কিছু নিম্নমানের কোম্পানি কম দামে ওষুধ বা কীটনাশক বিক্রি করছে। তা দিয়ে ফসলের রোগ সারছে না। এ রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির জন্য আবহাওয়াজনিত কারণের পাশাপাশি নিম্নমানের বীজ ব্যবহারকে দায়ী করেন শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মুজাহিদ সরকার। তার ভাষ্য, এ রোগ দমনে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ওষুধ নিয়ম মেনে ছিটাতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে নিম্নমানের কীটনাশক বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলবুর রহমান বলেন, ফসলের রোগ সারাতে কৃষকদের ভালো কোম্পানির মানসম্মত ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।