ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মিরাশার চাষিবাজারের হাত ধরে জাজিরার কৃষকদের এগিয়ে চলা

মিরাশার চাষিবাজারের হাত ধরে জাজিরার কৃষকদের এগিয়ে চলা

কৃষিনির্ভর শরীয়তপুর জেলার কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের প্রয়াসে ২০০৮ সালে জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হয় মিরাশার চাষিবাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালিত ‘মিরাশার চাষি বাজার’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাত্র ৩২ শতক জমির উপর বাজারটি পথ চলতে শুরু করে। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আপসহীন থাকায় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরের ব্যবধানে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়ে এখন তিন একরে পৌঁছেছে। কৃষক সমবায় ভিত্তিতে বাজারটিতে এখন ৮০টি আড়তের মাধ্যমে এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনাবেচা করছেন সহস্রাধিক পাইকার। বছরে এই বাজারে এখন প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার সবজি বেচা- কেনা হয়। পদ্মা সেতু চালুর পর পুরো দৃশ্যপট বদলে গিয়ে মিরাশার চাষিবাজার এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে কিছু কিছু সবজি ইউরোপসহ বিশ্ববাজারে স্থান করে নিয়েছে। বাজারে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকদের কোনো খাজনা দিতে হয় না। ফলে কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পেয়ে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, চাষি বাজারটি কেবল কৃষকদেরই লাভবান করছে না, পদ্মা সেতুর সুফলকে কাজে লাগিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এই সময়ে শরীয়তপুরকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মিরাশার চাষি বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পাইকার মো: আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, এ বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাধাপকি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা ময়মনসিংহ ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নেয়। এ বাজারে টাটকা সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও অনেক বেশি। এ ছাড়াও ২০২২ সাল থেকে এখানকার কিছু কিছু সবাজি ইংল্যান্ড কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই বাজারে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে এই বাজারে প্রতিদিন তিন কোটি টাকার ও বাকি ৬ মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখ টাকার সবজি বেচা-কেনা হয়। এখানে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো খাজনা নেয়া হয় না বলে দিনে দিনে বাজারে কৃষকের উপস্থিতি বাড়ছে। ভরা মৌসুমের ৬ মাস এই বাজারে প্রতিদিন সহস্রাধিক কৃষক ও বাকি ৬ মাস ৫ শতাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাসরি এখানে বিক্রি করেন।

জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক মো: মোশারফ মোল্লা বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি আমাদের এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আশির্বাদ। এ বাজারটি প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের সবজি দালালদের (মধ্য সুবিধাভোগী) দৌরাত্ম্যের কারণে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হতো। আবার দূরের বাজারে গেলে অনেক খাজনাও দিতে হতো। কিন্তু মিরাশার চাষি বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন আমাদের সবজি খুব সহজেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। খেত থেকে সবজি তুলে কম খরচে সহজেই বাজারে নিয়ে আসতে পারছি। তাই আগের তুলনায় লাভও হচ্ছে বেশি। বাজার হাতের নাগালে হওয়ায় দিনের কাজ নষ্ট না করে যে কোনো সময় সবজি এখানে নিয়ে আসতে পারছি। বাজার কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কোনো খাজনা না নেয়ায় খরচও কমে গেছে। মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো: প্রিন্স খান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাজারটি কৃষকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করে আসছি। বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বাজার কমিটির মাধ্যমে কৃষক ও পাইকারদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ৩২ শতক জমিতে বাজারটির যাত্রা শুরু হলেও দিনে দিনে বেচা-কেনা বাড়তে থাকায় পরিধি তিন একরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে এখানকার সবজি এখন খুব সহজেই ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে পৌঁছে যেতে পারছে। এ ছাড়াও পদ্মা সেতুর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এই বাজারের নিরাপদ সবজির সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে জাজিরার কৃষকরা এখন আগের তুলনায় আরো বেশি লাভবান হচ্ছেন। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় কৃষকরাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। কৃষি পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। যাতে মানসম্মত সবজি উৎপাদন করে কৃষকরা বেশি দাম পায়। বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়েও আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। তাছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে মিরাশার চাষিবাজারের বেচা-কেনার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এই সময়ে বাজারটি জেলার কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত