ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিনিরাইলে ঐতিহ্যবাহী মেলা

জামাই-শ্বশুরের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

জামাই-শ্বশুরের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিনিরাইলে বসেছে ঐতিহ্যের মাছের মেলা। গতকাল সকাল থেকে মেলায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা শুরু করেন জামাই-শ্বশুররা। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ৭০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড়। সরেজমিন দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি নিয়ে বসেছে দোকানিরা। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা ও রূপচাঁদা উঠেছে। মেলা ঘিরে আশপাশের কয়েক জেলার মানুষের সমাগম ঘটে।

দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন তারা মেলার মূল ক্রেতা। তবে এ মেলা ঘিরে এলাকার জামাই-শ্বশুরদের মধ্যে মাছ কেনার প্রতিযোগিতা চলে। স্থানীয়রা জানান, ১৮ শতকে মেলাটির প্রচলন হয়। মূলত মাছ মেলা হিসেবে শুরু হলেও পরে এটি জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়। প্রতি বছর মেলাবে কেন্দ্র করে বিনিরাইল ও আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুররা তাদের মেয়ের জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়।

ওই এলাকার প্রবীণরা জানান, উপজেলার জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চার মোহনায় বিনিরাইল গ্রামে বসে মাছের মেলা। প্রায় ২৫০ বছর ধরে কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করেন। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে বিনিরাইল গ্রামে এ মাছের মেলা বসে। মেলাকে সামনে রেখে আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। ঈদ, পূজা পার্বণ বা অন্য কোনো উৎসবে দাওয়াত পেয়ে অনেক সময় শ্বশুরবাড়ি না আসলেও বিনিরাইলের মাছের মেলায় জামাইরা ঠিকই আসে। মেলায় মাছের পাশাপাশি হরেকরকম মিষ্টি বিক্রি হয়।

প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০-৪০০ টাকা। এক কেজি ওজনের একটি বালিশ আকৃতি মিষ্টি বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এছাড়া মেলায় কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্র, ফল, খেলনা, নানা ধরনের আচারসহ সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে। আশরাফুল নামের এক যুবক বলেন, পৌষ সংক্রান্তিতে মাঘ মাসের প্রথমদিনে বসে ঐতিহ্যবাহী বিনিরাইলের মাছের মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। কর্মব্যস্ততার কারণে খুব একটা সময় পাই না। তবে এ মেলায় হৃদয়ের টানেই ছুটে আসি। মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া মেলাটি এখন রূপ নিয়েছে ঐতিহ্যে। এ মেলা স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, মেলাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশের টহল থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সেখানে অবস্থান করবে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, বিনিরাইলের মাছের মেলাটি স্থানীয় একটি ঐতিহ্য। বহু বছরের পুরোনো মেলাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে রয়েছে নানা ধরনের কথা। তবে ইতিহাস-ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রাম-গঞ্জে এ ধরনের আয়োজন সত্যি আমাদের চিরায়ত বাংলার রূপই ফুটে উঠে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত