ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জীবন

বাড়ছে রোগবালাই
হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জীবন

গত কয়েকদিনে মেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হাড় কাঁপানো তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা। এতে করে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সারাদিন হিমশীতল বাতাসের সঙ্গে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের জনজীবন। কনকনে বাতাসে বিশেষ কর নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও ক্ষেতমজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলোও শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত বিবারণের চেষ্টা করছেন। গাংনী উপজেলা শহরের অটোরিকশাচালক খোকন মিয়া বলেন, শীতের তীব্রতা বেশি ও অধিকাংশ সময়েই কুয়াশা থাকছে। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কেউ বের হচ্ছে না। দিনের অনেকটা সময় যাত্রী অভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। মেহেরপুর শহরের রিকশাচালক আয়ূব হোসেন বলেন, তীব্র শীতের কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিনে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা রোজগার হচ্ছে। অন্যান্য সময় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া মারি। এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৪ শতাংশ। একই তাপমাত্রা মেহেরপুর জেলার জন্যও প্রযোজ্য। গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, শীতবস্ত্রের যা বরাদ্দ এসেছিল এরইমধ্যে বিতরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান জানান, সরকারি ত্রাণ তহবিল থেকে জেলায় এখন পর্যন্ত চার হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কম্বল আসবে, সেটা বিতরণ করা হবে। এদিকে, শীত গত কয়েকদিনে শীত ও ঠান্ডাজনিত কারণে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৭৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল আল মারুফ বলেন, গত এক সপ্তাহে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীত ও ঠান্ডা জনিত রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৭৬ জন। এদের মধ্যে ৫২ জন শিশু, ৭৬ জন নারী ও ৪৮ জন পুরুষ। এদের মধ্যে ৭২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় বর্তি হয়েছে ১২ জন রোগী। মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার তৌফিক আহমেদ জানান, গত এক সপ্তাহে শীত ও ঠান্ডাজনিত কারণে প্রায় ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন শিশু ও ১০ জন নারী ও ৭ পুরুষ। এদের মধ্যে ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। যার মধ্যে ১৩ জনই শিশু। তবে গত দুই দিনের প্রচণ্ড শীতের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে পাঁচজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী। মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, শীত ও ঠান্ডাজনিত কারণে গত ১ সপ্তাহে ১৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০১ জন, নারী ৩০ ও পুরুষ ৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন সাতজন রোগী। এদিকে শীতের কারণে আবহাওয়া জনিত যেসব রোগ বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা কাশি ও জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত