ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

শীতে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চল। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা আরো দীর্ঘায়ু ও বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ২ জানুয়ারি থেকে ঘোড়াঘাটসহ এ অঞ্চলে অব্যাহত তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। গত ৯ জানুয়ারি রাত ১০টার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে চারপাশ। বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপ টপ করে শিশির ঝরতে দেখা যায়। কুয়াশার তীব্রতায় সামান্য দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমন চিত্র ধরা পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায়। ফলে এ অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। বেশ কিছু যানবাহন রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা কয়েকজন বাস ও ট্রাক চালকের সাথে কথা হলে তারা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। ফগ লাইট ব্যবহার করেও অনেক সময় সামনের পথ দেখতে পারছেন না তারা। চার ঘণ্টার রাস্তা পার হতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগছে। এ ছাড়া মহাসড়কের বাঁক ও লিংক রোডগুলো পার হওয়ার সময়ও অধিত সতর্ক থাকতে হচ্ছে। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজনসহ সাধারণ মানুষ।

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। অসহায় হতো দরিদ্র ছিন্নমূল নিম্ন আয়ের মানুষরা খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। এ উপজেলায় সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় ২ হাজার ৭৪০ পিস কম্বল। তবে তা প্রোয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে বরাদ্দ চেয়ে আবদন করা হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো বীজতলা। শীত উপেক্ষা করে আলু, সরিষা ভুট্টা, গম খেতে কাজ করতে দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষকে। অধিকাংশ চারাই লালচে-হলুদ হয়ে গেছে। কৃষি অফিস জানিয়েছেন, এখনো বীজতলা নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে এরকম আবহাওয়া আর কিছু দিন থাকলে বীজতলা নষ্ট হতে পারে। এজন্য কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এদিকে শীতের তীব্রতায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া, সর্দিকাশী ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টির শঙ্কা আছে। এতে শীত আবার বেড়ে যেতে পারে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তরের জেলাগুলোর উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। টানা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অল্প বাড়লেও কমেছে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এই জেলায়। ওই সময় জেলায় বাতাসে আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ এবং বাতাসের গতি ছিল ২ নটস। গত ৯ জানুয়ারিতে এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কমতে থাকে তাপমাত্রা। এতে বৃদ্ধি পায় শীতের প্রভাব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত