তীব্র শীতে ফসলের বড় ক্ষতির শঙ্কা

উৎপাদন কমছে ডিম-মুরগির

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীতের প্রকপ কিছুটা বেশি। আর গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। দুয়েক দিনে শীতের এ তীব্রতা কমে আসার সম্ভাবনাও নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশার কারণে রোদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র শীতে মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়েছে, তেমন উরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ফসল উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরোর বীজতলা। ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলার গোড়া ও পাতা পচা রোগ এবং চারা হলুদ বর্ণ হয়ে মারা যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বীজতলা লালচে হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা বীজতলা রক্ষায় নানান পদক্ষেপ নিলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা কাজে আসছে না। কৃষি বিভাগ বলছে, এসময় মাঠে বোরোর বীজ বপন করা হয়েছে। ধানের বয়স ৪০ দিন বা ৪৫ দিন হলে চারা তুলে মাঠে রোপণ করা হয়। এছাড়া আলুসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি; ডাল, গম, সরিষাসহ তৈলবীজ জাতীয় ফসল মাঠে রয়েছে। যেগুলো ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শীতকালীন ফসলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক এসব ফসল রক্ষায় বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ সময় ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা এবং চারার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বীজতলা রাতে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। বীজতলা থেকে পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমা হওয়া শিশির ঝরিয়ে দিতে বলা হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নওগাঁ কোলা এলাকার কৃষক করিম উদ্দিন বলেন, পরামর্শ দেওয়া হলেও সেগুলো কাজে আসছে না। কারণ শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। অনেক খরচ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ অনুযায়ী বালাইনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। তারপরও ভালো ফল আসছে না। একদিকে উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে চারা রক্ষা করতে না পারলে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। বোরোর পরে শঙ্কায় রয়েছে আলু। বগুড়ার শীবগঞ্জের চাষী এনামুল হক বলেন, তার প্রায় ১১ বিঘা জমিতে নাবি ধসা রোগের আক্রমণ হয়েছে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আবহাওয়ার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দিন দিন ওই এলাকায় তাপমাত্রা কমছে, বাড়ছে কুয়াশা। কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন এমন কয়েকজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে চলে গেলে ধানের চারাগাছ হলুদ হয়ে যেতে পারে, তখন তা খাদ্য তৈরি করতে পারবে না। চারা মরে যেতে পারে। পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রা যখন ২০ ডিগ্রির নিচে চলে আসে ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য আর্দ্রতা ৮০ বা ৯০ পারসেন্ট হয়ে যায়, তখন শীতকালীন ফসলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হয়। এখন অধিকাংশ এলাকায় এ পরিস্থিতি চলছে। এছাড়া এসময় যেসব ডাল ও তেল জাতীয় ফসল চাষ হয়, ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়া এসব ফসলে রোগ বিস্তারের জন্য অনুকূল। তারা বলছেন, এসময় মসুর ডাল গোড়া-পচা রোগে আক্রান্ত হয়। সরিষাতে দেখা দেয় কাণ্ড পচা রোগসহ অলটারনারিয়া ব্লাইট। পাশাপাশি বিভিন্ন ফল গাছের নানান ধরনের রোগ হয়। এছাড়া মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটাসহ শীতকালীন সবজির গাছ মরে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, এ পরিস্থিতিতে অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজন সাপেক্ষে সবখানে ধানের বীজতলা এবং আলু খেতে পলিথিনের শেড নির্মাণে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বালাইনাশকগুলোর সরবরাহ ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতেও কাজ করা হচ্ছে। এদিকে গত দেড় সপ্তাহ থেকে মুরগির উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে দাবি করছেন খামারিরা। বিভিন্ন স্থানে শীত বৃদ্ধির ফলে মুরগি ও ডিমের দামও বাজারে বেড়েছে। শীতের কারণে মুরগির অপুষ্টি, রাণীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

পাশাপাশি মুরগির অপুষ্টিজনিত সমস্যাও বেশ প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনটি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বাকি আটটি গরু নিয়ে আমি চিন্তিত। এগুলো বাহিরে নেওয়া যাচ্ছে না। খাবার ও ওষুধের খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। উল্টো দুধের পরিমাণ আগের থেকে অর্ধেকে নেমেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, শীতে সবকিছুর মতো পোল্ট্রি খাতও প্রভাবিত হয়েছে। রোগ বেড়ে গেছে। কমে গেছে উৎপাদন।