ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নওগাঁয় মালচিং পদ্ধতিতে বেড়েছে সবজি চাষ

নওগাঁয় মালচিং পদ্ধতিতে বেড়েছে সবজি চাষ

নওগাঁয় নিরাপদ সবজি চাষাবাদে বেড়েছে মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার। এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার কম হয়। রবি মৌসুমে জমিতে পানির স্বল্পতা থাকায় এবং মালচিং চাষ পদ্ধতি লাভজনক হওয়ায় উচ্চমূল্যের সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। এ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া উৎপাদন খরচ কমবে। পাশাপাশি কীটনাশক মুক্ত সবজি পেয়ে ভোক্তারা উপকৃত হবে এবং চাষীরাও লাভবান।

মালচিং কি : মালচিং মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজিখেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেয়া হয় তখন তাকে মালচ বলে। আর পদ্ধতিটিকে বলে মালচিং। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। এছাড়া ভালো ফলনের জন্য মাটি ঢেকে দিয়ে আর্দ্রতা সংরক্ষণে বিশেষভাবে উপকারি। কারণ এ পদ্ধতি ব্যবহারে ফসল ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। মাটির রস সংরক্ষণে এবং আগাছার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে এটি একটি ভালো পদ্ধতি।

জেলার বদলগাছী উপজেলার জগন্নাথপুর, বসন্তপুর, পাহাড়পুর, দোনোইল গ্রামের মাঠে মালচিং পেপারে চাষ করা হচ্ছে ক্যাপসিকাম, টমেটো, শসা, মরিচ, স্ট্রবেরি, বেগুন, করলাসহ নানা সবজি। এমন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্য চাষিরাও ফসল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। মূলত রবি মৌসুমে জমিতে পানির স্বল্পতা থাকায় এই মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে কৃষকরা অল্প পরিশ্রম, সেচ, খাদ্য ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের দ্বিগুণ উৎপাদন পেয়ে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। মালচিং পদ্ধতিতে প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে উচ্চমূল্যের ফসলসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। মালচিং পদ্ধতিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার কম হওয়ায় ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ সবজি। অপরদিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। প্রতিনিয়ত মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ কৃষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মালচিং এ কাগজের দাম কমানো হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে। উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের ক্যাপসিকাম চাষি নিলুফা ইয়াসমিন বলেন- প্রথমে ইউটিউবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়।

এরপর স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১২ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে খরচ অনেক কম হওয়ার কারণে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। আগামীতে এ পদ্ধতির মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ করা ইচ্ছা আছে। একই এলাকার আরেক চাষি ইবনে সাবিত বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে শসা ও করলা চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে ফলনও বেশি পাওয়া সম্ভব। আগামী তরমুজের মৌসুমে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে তরমুজসহ অন্যান্য ফসল চাষ করবো। বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, সবজি চাষের উপজেলা হিসেবে খ্যাত বদলগাছী উপজেলার কৃষকদের কাছে এই মালচিং পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দেশের কৃষি ও কৃষকদের আধুনিকরণ করতে এমন উন্নত কৃষি প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই। কৃষিকে আধুনিকায়ন করতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থাগুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে দেশের কৃষিকে অল্প সময়ে আরো অনেকদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত