‘বড়ভাইদের’ ছত্রছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। উঠতি বয়সি এসব তরুণ মাদকে জড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত। বিভিন্ন সময়ে কেশবপুর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধারসহ কিশোর গ্যাং বাহিনীদের গ্রেফতার করলেও থামছে না মাদকের ছোবল। প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কেশবপুর শহর কেন্দ্রীক এলাকাসহ ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেও এর ভয়াবহতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উঠতি বয়সী যুবক, কিশোর গ্যাং বাহিনী জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে। এর মধ্যে উপজেলার মধ্যকুল, ভোগতি, বায়সা, মূলগ্রাম, ব্রম্মকাটি, বালিয়াডাঙ্গা, বাজিতপুর, সাবদিয়া, হাবাপোল, রামচন্দ্রপুর, আলতাপোল, মঙ্গলকোট, চুয়াডাঙ্গা, কন্দর্পপুর, হাসানপুর, টিটাবাজিতপুর, বুড়িহাটি, চিংড়া, সাগরদাঁড়ি, ঝিকারা, জিয়েলতলা, মজিদপুর, প্রতাপপুর দাশপাড়া, শ্রীফলা, শ্রীরামপুর, পাঁজিয়া, মাদারডাঙ্গা, কলাগাছি, গৌরিঘোনা, সরসকাটি, বরনডালি, সাতবাড়িয়া, সন্নাসগাছা, আড়ুয়া, সানতলা, কেদারপুর, বাউশলা, ভান্ডারখোলা, ফতেপুর, গড়ভাঙ্গা, খতিয়াখালি মোড়, কেশবপুর তেলপাম্প, ট্রাক টার্মিনাল, কালাবাসা মোড়সহ পৌর এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থানীয় ও বহিরাগত যুবকরা এসে মাদক ব্যবসা এবং সেবন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, সম্প্রতি কেশবপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ত্রিমোহিনী মোড়ের একটি মার্কেট থেকে প্রচুর পরিমাণ ফেনসিডিলের বোতল উদ্ধার করা হয়। সেখানে গডফাদারসহ কিশোর গ্যাং বাহিনী ওঠাণ্ডবসা করে থাকে। কিন্তু তার কোনো সুফল দেখা যায়নি। যার কারণে কিশোর গ্যাং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সেই সাথে মাদকের হারও বেড়েছে। এলাকার অভিভাবকরা প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান।

কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দিন আলা বলেন, প্রতিনিয়ত পৌর এলাকাসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাদক স্পটে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় মাদকদ্রব্য বিকিকিনি বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে। কিশোর গ্যাং বাহিনী মাদকে জড়িয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বিশ্বাস বলেন, কিশোর গ্যাং বাহিনী বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। মঙ্গলকোট বাজার, মাগুরখালী বাজারের পাশে, কন্দর্পপুর, হদ, পাথরা, পাচারই এলাকার বিভিন্ন মাছের ঘেরের টংঘরে, বসুন্তিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও রামকৃষ্ণপুর এলাকার দিকে কিশোর গ্যাং বাহিনীসহ মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ বাহিনীরা বড়ভাইদের লোক বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর পলাশ বলেন, এলাকার রাজনৈতিক নেতারা প্রভাব বিস্তারের কারণে কিশোর গ্যাং বাহিনী তৈরি করেছে। যার কারণে এ বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা মাদকের সাথে জড়িয়েছে। এমনকি চুরি, ছিনতাই বেড়ে গেছে। তিনি প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা নাগরিক সমাজের আহব্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা সব সময় মাদককে না বলি। যদি এদের রুখে দেওয়া না যায়, তাহলে কিশোর গ্যাং বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এরা বেশিরভাগ শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ওঠা বসা করে থাকে। সেখানে মাদক ব্যবসা ও সেবন করে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। যার কারণে কেশবপুরবাসীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার জন্য কঠোরভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আলম বলেন, এরইমধ্যে কিশোর গ্যাং বাহিনীদের তালিকা তৈরি করা শুরু হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজনকে মাদকসহ গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদের সাথে কোনো আপস নেই। তাদের গডফাদারদের শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।