লালি উৎপাদনে খরচ বেড়েছে

দামও বাড়তি

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আখের রসে তৈরি লাল রঙের ঘন একটি তরলের নাম লালি। নানা বয়ফস নারী-পুরুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই খাবার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামবাংলার একটি প্রচীনতম সুস্বাদু তরল খাবার হিসেবে পরিচিত এটি। আর এটি উৎপাদন হয় জেলার কৃষিসমৃদ্ধ বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে। শীতের মৌসুমে চিতই পিঠাসহ নানা রকম পিঠা লালি গুড় দিয়ে খেতে অনেক মজা। তবে আগের চাইতে লালি উৎপাদন অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, এক সময় পুরো উপজেলার মধ্যে এই বিষ্ণপুর গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার লালি উৎপাদন করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই লালি ব্যবসায় খরচের চাইতে লাভ কমে আসায় অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামটিকে এখন ১০টি পরিবার এই লালি উৎপাদন করে। জানা যায়, সুস্বাদু এই লালির কদর পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় রয়েছে। তবে লালি শব্দটি আঞ্চলিক। লাল বর্ণ প্রকৃতির তরল খাবার হওয়ায় গ্রামের লোকজন এর নাম দিয়েছে লালি। প্রকৃতপক্ষে এটি আখের রসের মাধ্যমে তৈরিকৃত গুড়ের একটি তরল রস। প্রতি শীত মৌসুমের তিন মাস লালি উৎপাদন ও বিক্রি হয়। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, আশপাশের অন্যান্য জেলার পাইকাররা এসে লালি কিনে নিয়ে তাদের অঞ্চলে খুচরা হিসেবে বিক্রি করেন। আখের রসে তৈরি এই তরল গুড় দারুণ মুখরোচক, মূলত পিঠা-পুলি ও পায়েস তৈরিতেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় উৎপাদকরা বছরের এই তিন মাস লালি বিক্রি করে বাড়তি লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। আর এসব জমিতে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হবে। চলতি শীত মৌসুমে বিজয়নগরে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন লালি বিক্রি হবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। সরেজমিন দেখা যায়, কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় আখ চাষ করেছেন। আখ জমি থেকে কেটে নিয়ে এসে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াইয়ের কাজ করছেন। দিনভর আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহের পর রাতে সেই রস চুলায় জ্বাল দেওয়া হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় সুস্বাদু লালি। বিষ্ণপুর গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া ১৪ বছর ধরে এই লালি উৎপাদন করেন। স্ত্রী জোৎস্না বেগমসহ ৮ জন মিলে উৎপাদন করেন এই লালি। গত বছর লালি উৎপাদনে তার ব্যয় ছিল ৭ লাখ টাকা। আর খরচ বাদ দিয়ে এই ব্যবসায় লাভ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এ বছরও লালি উৎপাদন খরচ ৫০ হাজার টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয়েছে। তাই প্রতি কেজিতে লালির দাম বাড়িয়ে ১৫০ টাকার বিক্রি করছেন তিনি। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, আশা করছি এবারের মৌসুমে অন্তত ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষের মাধ্যমে ২ কোটি টাকার লালি উৎপাদন হবে। আগে প্রচুর পরিমাণে লালি তৈরি হতো। বর্তমানে কৃষকরা জমিতে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ করছেন। আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছেন তারা। এতে করে লালিও কম তৈরি হচ্ছে।