জয়পুরহাটে আলু খেতে লেট ব্লাইট রোগ

দিশাহারা কৃষক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জয়পুরহাট প্রতিনিধি

আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। অধিক লাভের আশায় এবার এ জেলায় ব্যাপক আলুর চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে আলু খেতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক হারে লেট ব্লাইট (নাবীধ্বসা) রোগ। আলু রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গাছ মরে যাচ্ছে। জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ হয়েছে। যার মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়েছে। গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে কৃষকরা এবার অধিক উৎপাদনের আশায় বেশি দাম দিয়ে উন্নত জাতের আলু বীজ বপন করেছেন। এ অবস্থায় বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচাতে পারছেন না কৃষকরা। তাই এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এছাড়া সার, সেচ ও কীটনাশকের দামও বেশি। ফলে গত বছরের তুলনায় আলু চাষে এবার বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়েছে কৃষকদের। এদিকে বীজ বপনের দেড় থেকে দুই মাস পর আলু গাছে ব্যাপক হারে মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে আলু গাছের কাণ্ড ও পাতা মরে যাচ্ছে এবং গাছও মরে যাচ্ছে। গাছ বাঁচাতে কৃষকরা ৩-৪ দিন পরপর ছত্রাকনাশক স্প্রে করছে। তাতে মড়ক কিছুটা কমলেও পুরোপুরি ভালো হচ্ছে না। অনেকেই আবার মড়ক থেকে আলু বাঁচাতে দুই মাস বয়সের আলু তুলে বিক্রি করছে। কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, তিন বিঘা জমিতে এবার আলুর চাষ করেছি। কিন্তু আলুর গাছ পচে মরে যাচ্ছে। ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে করে ফলন অনেকটা কম হবে। বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, চার বিঘা জমিতে ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক জাতের উন্নত বীজ কিনে আলু চাষ করেছি। বর্তমানে আলু গাছের বয়স দেড় মাস। কিন্তু পুরো খেতেই মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তিন বার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কিছুটা মড়ক কমেছে। তবে পুরোপুরি রোগ সারেনি। এজন্য প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হচ্ছে। ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শতকে চার মণ হারে আলু উৎপাদন হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু যেভাবে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এবার আলুর উৎপাদন অনেক কম হবে। বার বার স্প্রে করেও গাছের রোগ ভালো হচ্ছে না। ক্ষেতলাল উপজেলার তালশন গ্রামের কৃষক জামির উদ্দিন বলেন, ৬ বিঘা জমি পত্তন (লিজ) নিয়ে আলু চাষ করেছি।

কিন্তু পাতা মরা রোগ দেখা দেয়ায় ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কোম গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, এবারের মতো কোনো বছর আলু খেতে এমন রোগ দেখা দেয়নি। কৃষি অফিসাররা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে নাকি এবার আলু খেতে রোগ বেশি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেও আলু ক্ষেত বাঁচাতে পারছি না। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার এনামুল হক বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার আলু খেতে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।