ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৪ মাসেই পাওয়া গেল এক মৌসুমের মাছ

৪ মাসেই পাওয়া গেল এক মৌসুমের মাছ

গত মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মোট ৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছিল। এ মাছ হতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) শুল্ক আদায় করেছে ১১ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। তবে চলতি মৌসুমের প্রথম চার মাসেই গত আহরণ মৌসুমের মোট মৎস্য অবতরণের রেকর্ড অতিক্রম করল বিএফডিসি। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চার মাসে কাপ্তাই হ্রদ হতে ৫ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছে বিএফডিসির চারটি বিপণনকেন্দ্রে। এর বিপরীতে ১১ কোটি ৩৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা শুল্কহার আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিএফডিসির তথ্যমতে, গতবারের চেয়ে চলতি আহরণ মৌসুমের প্রথম চার মাসেই মাছ অবতরণ রেকর্ড করেছে। মাছের অবতরণের পাশাপাশি অতিক্রম করেছে শুল্কহার আদায়ও। স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলে হ্রদে মাছ আহরণ। সে হিসাবে আরো চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শেষে দেওয়া হবে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। সামনের চার মাসের আহরণে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিএফডিসির কর্মকর্তারা।

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ ও অবতরণের এই রেকর্ড গড়ার নেপথ্যে বিএফডিসির ‘অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা’কে প্রাধান্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিএফডিসির বিপণনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদ হতে আহরিত মাছ রাঙামাটির তিনটি ও খাগড়াছড়ির একটিসহ চারটি বিপণণকেন্দ্রে শুল্কহার আদায় শেষে বিক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়ে থাকে। বিপণনকেন্দ্রে আসা মাছের সবই পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সাম্প্রতিক সময়ে অসাধু কর্মীদের লাগাম টেনে ধরায় মাছ পরিবহন ও বাজারজাতকরণে শৃঙ্খলা ফিরেছে বলে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। অবতরণ ও শুল্কহার আদায় বৃদ্ধির কারণে হিসেবে শৃঙ্খলাকেই দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। তবে চলতি বছর কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১২ দিন আগেই বন্ধ করা হয় মাছ আহরণ। আবার তিনমাসের নির্ধারিত সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় দুই দফায় আরো ১ মাস ১২ দিন বন্ধের সময় বর্ধিত করা হয়। ৪ মাস ১২ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাপ্তাই হ্রদে ফের মাছ আহরণ শুরু হয়। রাঙামাটি জেলা শহরের প্রধান বিপণনকেন্দ্র ছাড়াও জেলার কাপ্তাই, মারিশ্যা এবং খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে উপ-বিপণনকেন্দ্র রয়েছে বিএফডিসির। চারটিকেন্দ্রে হ্রদের মাছ অবতরণ ও শুল্কহার আদায় শেষে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি মাছ আসে প্রধান বিপণনকেন্দ্রেই। স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, রাঙামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী ব্যতিত বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও মহালছড়ি উপজেলা মিলে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া জানান, ‘প্রায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদে প্রতি বছরই মাছের উৎপাদন কমার বিষয়টি শুনে আসছি। বিএফডিসি হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চলতি বছর মাছের ল্যান্ডিংয়ের (অবতরণ) সময় সীমিত করে উৎপাদনে জোর দিয়েছি। হ্রদে গত অর্থ-বছরের সমপরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে চলতি বছরের প্রথম চারমাসেই। গত বছর এই সময়টাতে আমাদের মাছের দৈনিক অবতরণ ছিল ৭ থেকে ৮ টন, এবছর সেটি ন্যূনতম ২০ টনে দাঁড়িয়েছে। এতে এটা ধরে নেওয়া যায় হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশাবাদী মাছের উৎপাদন বলবৎ থাকবে এবং জেলে-ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত