ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বদলগাছীতে ঝুট কাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে পাপোশ

বদলগাছীতে ঝুট কাপড় থেকে তৈরি হচ্ছে পাপোশ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় আটটি কারখানায় ঝুট কাপড়ের সুতা থেকে তৈরি হচ্ছে পাপোশ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পাপোশ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে তিন শতাধিক হতদরিদ্র নারী-পুরুষের। তবে প্রশিক্ষণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাজের পরিধি আরো বাড়বে। সেই সঙ্গে আরো অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জেলার বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ভান্ডারপুর গ্রামে ঝুট কাপড়ের সুতা থেকে পাপোশ তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। এ গ্রামের যুবক আহসান হাবিব হাসান। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে গত ৪ বছর আগে গ্রামে এসে কিছু করার উদ্যেশের গড়ে তুলেন পাপোশ তৈরির কারখানা। যার নাম দিয়েছেন আলহাজ্ব ট্রেডার্স। উদ্দেশ্য ছিল নিজে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকাবাসীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শুরুতে একটি মেশিন দিয়ে চারজন কারিগর নিয়ে ঝুট কাপড় থেকে পাপোশ তৈরি শুরু করেন। প্রথমে ঝুট কাপড় থেকে সুতা বের করে তৈরি করা হয় দড়ি। তারপর দড়ি থেকে হয় সুন্দর পাপোশ। বর্তমানে তার কারখানায় পাঁচ সেট মেশিন দিয়ে পাপোশ তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে ৭২ জন হতদরিদ্র নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যাদের অধিকাংশ নির্যাতিতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা গৃহবধূ। প্রতিদিন এই কারখানা থেকে প্রায় ১ হাজার পিস পাপোশ ও দেড় হাজার পিস টেবিল ম্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এসব পাপোশ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলায় সরবরাহ করা হয়। উদ্যোক্তা আহসান হাবিব বলেন- শুরুতে একটি মেশিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কিনে চারজন কারিগর দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। এর দেড় বছর পর আরো দুইটি মেশিন কিনে জনবল বাড়ানো হয়। কাঁচামাল ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয়। ঝুট কাপড়ের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। বর্তমানে ৯০-১১০ টাকা কেজি দরে ঝুট কাপড় কিনতে হচ্ছে। যা আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। এছাড়া রঙিন কাপড় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। ঝুট কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে। তিনি বলেন- প্রতিদিন কারখানায় প্রায় এক হাজার পিস পাপোশ এবং টেবিল ম্যাট প্রায় দেড় হাজার পিস তৈরি হয়।

প্রতিপিস ১৩ বাই ২০ ইঞ্চি আকারে পাপোশ ৬৫ টাকা এবং ১১ বাই ১৯ ইঞ্চি আকারে পাপোশ ৫৫ টাকা। এছাড়া টেবিল ম্যাট ৬ ইঞ্চি আকারে ১৩ টাকা, ৭ ইঞ্চি আকারে ১৭ টাকা এবং ৮ ইঞ্চি আকারে ২৩ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়। শ্রমিকরা প্রতিপিস পাপোশের মজুরি পান ৮-৯ টাকা এবং টেবিল ম্যাট ৩-৪ টাকা। খুব সীমিত লাভে এসব বিক্রি করা হয়। আহসান হাবিব এর দেখে এলাকায় আরো সাতটি পাপোশের কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিপিস পাপোশ পাইকারি বিক্রি হয় ৫৫-৭০ টাকায় এবং টেবিল ম্যাট ১৩-২০ টাকা। প্রতিদিন ৮টি কারখানা থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোরসহ কয়েকটি জেলায় এসব পণ্য সরবরাহ করা হয়। তবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থ সংকটে পড়তে হয়। স্বল্পসুদে ঋণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি তাদের। এসব কারখানায় প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কারখানায় কাজ করে এলাকায় হতদরিদ্র নারী-পুরুষ। প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৫০০ টাকায় মজুরি পায় শ্রমিকরা। কারখানায় কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের। তবে বিদ্যুৎতের ঘনঘন লোডশেডিং এ উৎপাদন কম হওয়ায় কমছে তাদের আয়। কারখানার ইনচার্জ আসমা খাতুন বলেন- কারখানার শুরু থেকে কাজ করছেন। শুরুতে সুতা বাছাইয়ের কাজ করতাম।

গত ১ বছর পর কারখানার তদারকির কাজ করছি। প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এখানে ৬৫ জন মহিলা ৭ জন পুরুষ কাজ করে। এখানে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রডাকশনে কাজ করে শ্রমিরা মোটামুটি আয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। কারিগর গৃহবধূ নিরা সুলতানা নিরু বলেন- কারখানায় যারা কাজ করছি সবাই হতদরিদ্র। এখানে কাজ করে বাড়তি আয় হয়। প্রডাকশনে কাজ করা হয়।

যতগুলো পণ্য তৈরি হতো, ততো টাকা পাওয়া যাবে। প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৫০০ টাকায় মজুরি পাওয়া যায়। এতে করে সংসারে স্বচ্ছলতা আসে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কাজে ব্যয় করতে পারি। কারিগর নুর আলম বলেন- সুতা থেকে দড়ি তৈরির কাজ করা হয়। মেশিন চালানোর জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এরমধ্যে যদি ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে আমাদের উৎপাদন কম হবে এবং মজুরিও কম পাব। বর্তমানে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এতে মজুরি কম হলে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত