ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্ষেতলালে স্কুল ভবন নির্মাণকাজে অনিয়ম

উদ্বোধনের আগেই হচ্ছে মেরামতের কাজ

উদ্বোধনের আগেই হচ্ছে মেরামতের কাজ

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই মেরামত করা হচ্ছে। ভবনের নিচতলার ফেঁটে যাওয়া মেঝের ঢালাই তুলে ফেলে নতুন করে করা হচ্ছে। মেঝে ফাটল ও ভবনের রংকরণ কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তবে প্রধানশিক্ষক দেল আফরোজ তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজের গুণগত মান নিয়ে আপত্তির কথা কথা পাত্তাই দেননি। তিনি উল্টো কাজের মান সন্তোষ হয়েছে বলে প্রত্যয়ন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণিকক্ষ ও একটি স্টোর কক্ষ বিশিষ্ট তিনতলার একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এ কাজের মোট বরাদ্দ ১ কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৩৯ টাকা। ঠিকাদার ১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৩ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। গত বছরের ২৮ আগস্ট কাজের মেয়াদ শেষ হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যলয়টির নতুন ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম তদন্তের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি গত ৮ জানুয়ারি পত্র দিয়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন। গত ১১ জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তদন্তের নির্দেশনার চিঠিটি পৌঁছায়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় তদন্তের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু করেছে। ওই বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন তিনতলার ভবনের নির্মাণকাজের মূল ঠিকাদার ছিলেন দিনাজপুরের মহিবুল ইসলাম। তবে ক্ষেতলালের স্থানীয় ঠিকাদার ফরিদ কাজটি করেছেন। শুরু থেকেই নতুন ভবন নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে শিক্ষকরা প্রশ্ন তোলেন। স্থানীয় ঠিকাদার শিক্ষকদের কথায় পাত্তা দেননি। আবার বাস্তবায়কারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের ক্ষেতলাল উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলীরাও ঠিকমতো তদারকি করেননি। এ অবস্থায় ঠিকাদার যেততেনভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করেন। কিছুদিন পর বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মেঝে ফাটল দেখা দেয়। নতুন ভবনের রঙ ফ্যাকাসে হয়। নতুন ভবনের এসব অনিয়মের কথা শিক্ষকরা স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা প্রকৌশলীকে জানান। এরমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দিল আফরোজ কাজটি সন্তোষজনক হয়েছে বলে প্রত্যয়ন দেন। নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই মেঝে ফাটল ও রং ফ্যাকাসে হওয়ার ঘটনাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান নতুন ভবন অনিয়মের ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। এরআগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার প্রকৌশলী, ক্ষেতলালের ইউএনও নতুন ভবন পরিদর্শন করেন। এরপর ভবনের মেঝের ঢালাই ও ভবনের রঙের কাজ নতুন করে আবার শুরু করা হয়। হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক দেল আফরোজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি। এ কারণে তার বক্তব্যে নেওয়া সম্ভব হয়নি। হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান চঞ্চল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। তার আগেই নতুন ভবনের নিচতলার মেঝে ফাটল ধরে ভবনের রং ফ্যাকাসে হয়েছে। আবার নতুন করে মেঝে ঢালাই ও রঙের কাজ করা হচ্ছে। যদি নির্মাণকাজে অনিয়ম না হতো তাহলে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর আবার নতুন করে এসব কাজ করা হতো না। ঠিকাদার নাকি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় কাজ করছে সেটি আমরা জানি না। এ নিয়ে কিছু কর্মকর্তার রসানলে পড়েছি। ক্ষেতলাল উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাশেদ ইমরান বলেন, হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজের ঠিকাদার দিনাজপুরের মহিবুল ইসলাম। তবে ফরিদ নামে ক্ষেতলালের স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ করেছেন। কাজের মেয়াদ গত বছরের আগস্ট মাসে শেষ হয়েছে। আমরা এখনো ঠিকাদারের কাছে বুঝে নেইনি। এলজিইডির বিভাগীয় প্রকৌশলী ভবনটি পরিদর্শন করে নির্মাণকাজে ত্রুটি পেয়েছিলেন। সেই কাজগুলো ঠিকাদার নতুন করে দিচ্ছেন। ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। জমানতের টাকাও রয়েছে। জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম সরেজমি তদন্তের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা তদন্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত