ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মৌচাষ করে সফল শাহ আলম

মৌচাষ করে সফল শাহ আলম

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বিশরপাশা ও সংলগ্ন অন্তত : ১৫টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চোখ জুড়ানো হলুদের সমারোহ-সরিষার খেত। এসব খেতের কাছাকাছি স্থানে সারিবদ্ধভাবে বিশেষ-বাক্স স্থাপন করে শাহ আলম গড়ে তুলেছেন বিশাল আকারের মৌ-খামার। না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই যে, এই খামার থেকে তিনি প্রতি বছর উৎপাদন করেন ৭ হাজার ১৫০ লিটার (৭ মেট্রিক টন ১৫০ কেজি) মধু। খরচ বাদে আয় করেন ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, মধু উৎপাদন খামার পরিচালনা করে নিজের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি অনেকের কর্মেরও সংস্থান করেছেন তিনি। পাশাপাশি তাকে অনুসরণ করে মধু উৎপাদন খামার গড়ে তুলার কথাও ভাবছেন এলাকার অনেকেই। কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চলতি বছর অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়ছে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার মধু উৎপাদনও বেশি হবে বলে আশা করছেন সবাই। নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম। নারায়ণগঞ্জের একটি প্রিন্টিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। কোভিড-১৯ (করোনা) অতিমারীর সময় তিনি চাকরি হারিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরে স্থানীয় বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২০ সালে পরিক্ষামূলকভাবে মাত্র ৫টি কলোনি (মৌবাক্স) দিয়ে শুরু করেন মধুচাষ। প্রথম বছরে তার আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

শাহ আলম বলেন, ‘সারাবছর আমি মধু উৎপাদনের কাজ নিয়েই থাকি। যেখানেই ফুল-ফসল সরিষা, লিচু, ধনে কালোজিরা ও সূর্যমুখীর জমি, উপকরণাদি নিয়ে সেখানেই চলে যাই। মধু উৎপাদন করি।’ তিনি জানান, মধুর বাজারজাত করাও অনেকটা সহজ। পাইকারি বাজার উঠানামা করলেও খুচরা বাজারে বেশ সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতিটি কলোনি থেকে গড়ে ৫৫ কেজি মধু পাওয়া যায়। তার ১৩০টি কলোনি আছে। বছরে দুইবার মধু পাওয়া যায়। খরচ বাদে প্রতি মৌসুমে তার আয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। অল্প পুঁজিতে একটা শিল্প গড়ে তুলতে পেরেছেন, এটা তার কাছে বড় পাওয়া। বর্তমানে তাকে অনুসরণ করে জেলায় মধু সংগ্রহের পেশায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ১৫ জন শিক্ষিত যুব-তরুণ। যাদের হাতে পাল্টে গেছে মধু আহরণের হাজার বছরের পুরোনো ধ্যান-ধারণা। মধুচাষ বা আহরণ এখন একটি শিল্প। ফলে জেলায় মধু চাষে উৎসাহী হচ্ছেন অনেকেই। তারা পরামর্শের জন্য শাহ আলমের কাছে আসেন। শাহ আলমও চেষ্টা করেন সাধ্যমতো সহযোগিতার। মধুচাষি মো: শামছুল হক জানান, শাহ আলম ভাইয়ের দেখাদেখি বাক্সে মধুচাষ শুরু করেছিলাম। সফলতা পেয়েছি। এতে আরো অনেকেই উদ্যোগী হয়েছেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নেত্রকোনার উপব্যবস্থাপক মো: আক্রাম হোসেন বলেন, মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাক্সে পালন করা হয়। এই বাক্সেই মধু সঞ্চয় করে মৌমাছির দল। তবে প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কাজ করতে গেলে বিপদ হতে পারে। শাহ আলম বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি একজন সফল মৌচাষি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নেত্রকোনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, এভাবে মধুর চাষ করায় পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলও ভালো হয়। উৎপাদন বাড়ে অন্তত স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। ব্যক্তি বা উদ্যোক্তাও যথেষ্ট লাভবান হয়। এক্ষেত্রে শাহ আলম অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত