নতুন কাঠামোয় বেতনের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

সরকারঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। গতকাল সকালে উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী, শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকলা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছু দিন ধরে সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই কারখানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের দাবির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ওই কারখানায় ভাঙচুর করে বাইরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান করে। পরে তারা ওই মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর চালায়। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে প্রায় দেড় ঘণ্টা চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।

খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ, মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায় পুলিশ বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে এ ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তবে এ বিষয়ে জানতে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার ঘোষিত যে নতুন বেতন কাঠামো করা হয়েছে। সেটা আমাদের কারখানায় দেওয়া হচ্ছে না। আগের বেতনের টাকায় তো সংসার চলে না। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে। তাই সরকার যে বেতন নির্ধারণ করেছে, আমরা সেটাই চাই। আমরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু বহিরাগতরা ও পুলিশ কেন আমাদের ওপর হামলা করবে? আমাদের অনেক শ্রমিক ভাই-বোন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে মালিকপক্ষ যদি সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন না করে, তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক মজুমদার জানান, মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর আন্দোলনরত শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু শ্রমিকরা কোনো কথা না শুনেই কারখানা ভাঙচুরে চেষ্টা চালায় এবং মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ কারণে পুলিশ অনেকটা বাধ্য হয়েই লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। তবে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।