ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাঙ্গাইলে তীব্র শীতে দুই শিশুর মৃত্যু

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি
টাঙ্গাইলে তীব্র শীতে দুই শিশুর মৃত্যু

উত্তুরে হিমেল হওয়া ও ঘন কুয়াশায় টাঙ্গাইল জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গতকাল সকালে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আজ মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কনকনে শীতে এরই মধ্যে পাঁচ মাস বয়সি দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দির দিন বাড়ছে। দিনভর শীতের তীব্রতা থাকায় জনজীবন এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম সাধারণ ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণায় দিনের তাপমাত্রা সকাল ৬টায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ মঙ্গলবার একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ছুটি বাড়ানো হতে পারে। এরই মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশা এবং দিনভর উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র শীতে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শীতের তীব্রতায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষরা বিপাকে পড়েছেন।

পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিম্ন আয়ের মানুষরা শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন।

জেলায় দিনের মধ্যবেলায় কখনো কখনো সূর্যের দেখা মিললেও তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে না। শীতার্ত মানুষ দিন-রাতে খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। বিকাল থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে পরদিন সকাল পর্যন্ত একই ধারা অব্যাহত থাকছে। শীতের কারণে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিন ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও হিমশীতল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকটতায় শহরের ব্যস্ততম সড়ক ও গ্রামের হাটবাজারগুলো অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ভোরে ঘনকুয়াশা থাকায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এদিকে শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-নিউনোনিয়া সহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঠান্ডাজনিতরোগে গত শনিবার দুপুরে কানাই বাদ্যকর ও বলাই বাদ্যকর নামে পাঁচ মাস বয়সি দুই যমজ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ওই শিশুরা উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর বাদ্যকরপাড়া গ্রামের উপেন্দ্র বাদ্যকর ও মনিকা বাদ্যকর দম্পতির সন্তান।

পারিবারিক সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ আগে ওই যমজ দুই শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। গত কয়েক দিনের ঠান্ডার প্রকোপ বাড়ায় শিশু দুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। গত শনিবার সকালে অবস্থার অবনতি হলে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত  ঘোষণা করেন।

টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন জানান, গতকাল সকাল ৬টায় দিনের তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৬টার পর দিনের তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মেনে আসে। সকাল ৯টার পর থেকে দিনের তাপমাত্রা উঠানামা করতে থাকে।

তিনি জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। শীত-সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলে দিনের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামায় আজ মঙ্গলবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার বিষয়টি জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক উভয় কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আজ এ বিষয়ে সভায় আলোচনাসাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত