কেশবপুরে প্রাইভেট ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতারণা

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরের অলিতে গলিতে গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে প্রতারণা। পথে বসিয়ে দিচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের। এসব ক্লিনিকগুলোতে কোনো প্রকার নিয়মনীতির বালাই নেই। অনিয়মকেই নিয়ম হিসেবে চালিয়ে দিয়ে ক্লিনিকের মালিকরা অল্পদিনেই কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে ও লাইসেন্স বিহীনভাবে কেশবপুরের অলিতে গলিতে গড়ে ওঠেছে ৮টি প্রাইভেট ক্লিনিক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত তদারকি না থাকায় একই লাইসেন্স নবায়ন না করে বছরের পর বছর অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও বিএমএর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এবং ডাক্তারদের কারণে এসব প্রাইভেট ক্লিনিক তাদের অবৈধ ব্যবসা চলিয়ে যাচ্ছে। কোনো অঘটন ঘটলেই ওই সিন্ডিকেটের মধ্যস্থতায় তা ধামাচাপা দেওয় হয়। ফলে এ পর্যন্ত কোনো ঘটনাই স্থানীয়ভাবে অভিযোগ বা মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারছে না। ১-২টি ঘটনা লোক দেখানো তদন্ত কমিটি করা হলেও সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে চলে নানা রকম তালবাহানা। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ৮০ শতাংশ ক্লিনিকে নেই। সাধারণ মানুষ বলছেন, কেশবপুরের অধিকাংশ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর বেশির ভাগই কসাইখানা। বেশির ভাগ ক্লিনিকই চলছে দালালের মাধ্যমে।

সরেজমিন জানা গেছে, ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতাল, কেশবপুর মডার্ন হাসপাতাল, কপোতাক্ষ সার্জিকাল ক্লিনিক, মহাকবি মাইকেল ক্লিনিক, হোসেন ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজি, কেশবপুর সার্জিকাল ক্লিনিক, হেলথ কেয়ায় হসপিটাল লিমিটেড, মার্তৃমঙ্গল ক্লিনিক নামে ৮টি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকগুলো বিভিন্ন রকম চটুকারদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোগীদের আকৃষ্ট করে আসছে। অভিযোগ আছে, সর্বরোগের চিকিৎসা প্রদানকারী এসব ক্লিনিকগুলোতে একজন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসলেই তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৫-৬টি পরীক্ষা। কিন্তু ২-৩টি ক্লিনিকবাদে কোনো ক্লিনিকেই সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান না থাকায় প্রায়ই ভুল রিপোর্টের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অসহায় রোগীদের। তাছাড়া এর আগে একই রিপোর্ট বিভিন্ন ক্লিনিকে আলাদা আলাদা হওয়ার ঘটনাও এসব ক্লিনিকে ঘটেছে।

তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ক্লিনিকের মালিকরা বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু দালাল নিয়োগ দিয়েছেন। এসব দালালদের কাজ হচ্ছে গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন ভুয়া ডাক্তারদের নগদ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তাদের মাধ্যমে ক্লিনিকগুলোতে রোগী ভর্তি করানো। রোগী ক্লিনিকে আনার বাবদে এসব ভুয়া ডাক্তাররা বাড়ি বসেই তাদের নির্ধারিত একটি অংশ পেয়ে থাকেন। কেশবপুরের নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আবু বক্কার সিদ্দিকী বলেন, কেশবপুরের অনেক ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে এবং সিভিল সার্জন অফিসের একটি টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করলে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন বলেন, এর আগে অনেক সমস্যা ছিল। আমি নিয়মিত তদারকি করছি। এখন অনেকটা স্বচ্ছভাবে এসব ক্লিনিকগুলো সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছে। তারপরেও কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।