ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক

বিলুপ্তির পথে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক

শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙের পোশাক আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সুতার মূল্য বৃদ্ধি, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও অর্থনৈতিক দৈনতার কারণে আদিবাসীদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকগুলো হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে জানা গেছে। এসব পোশাক এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। জানা যায়, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষে অবস্থিত শেরপুর জেলা।

এ জেলার সীমান্তের তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গারো, হাজং, কোচ, বানাই, বর্মনসহ বিভিন্ন জাতীগোত্রের প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস। রাংটিয়া আদিবাসী নেতা যুগল কিশোর কোচ বাঁকাকুরা গ্রামের ধীমানচন্দ্র কোচ জানায় একসময় এদের ছিল জমিজমা, গোয়াল ভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের আবর্তে সবকিছু হারিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। তারা বলেন, অতীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করছিল। সচরাচর প্রায় সকল আদিবাসী নারীদের পরনে দেখা যেতো তাদের হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাক। কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙের পোশাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, ওর্না। গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোশাকের মধ্যে রয়েছে দকমান্দা, দকশারী, ওর্না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোষাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকতো। কিন্তু এখন আর আদিবাসী নারীদের পরনে আগের মতো বাহারি রঙ্গের পোশাক চোখে পড়ে না।

উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী মিঃ রবেতা ম্রং বলেন, আদিবাসীদের অর্থনৈতিক সংকট, সুতার মূল্য বৃদ্ধি, সরঞ্জামাদির অভাবসহ বস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী কারিগরের অভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আগের মত আর নিজ হাতে পোশাক তৈরি করতে পারছে না। ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নাবেশ খকশী বলেন অতীতে সবাই কাপড় তৈরিতে অভ্যস্ত ছিল। তারা মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্মের লোকজন এসব বাহারি রঙ্গের পোশাক তৈরি করতে না পারার কারনে দিনে দিনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি বাহারি রঙ্গের পোশাকগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও ১০% আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখনো তা ধরে রেখেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বিয়ে-শাদীতে এখনো চোখে পড়ে এসব বাহারি রঙের পোশাক। রাংটিয়া গ্রামের আদিবাসী নেতা জাগেন্দ্র কোচ বলেন, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক জোগান পাওয়া গেলে আবারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত