শীত উপেক্ষা করে অনুশীলন

স্বপ্নের শিখরে পৌঁছার চেষ্টায় নারী ফুটবলাররা

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে ও স্বপ্নের শিউরে পৌঁছার চেষ্টায় কনকনে শীত এবং হিমেল হাওয়া ও নানা বাধাবিপত্তিকে উপেক্ষা করে পড়াশোনার পাশাপাশি অনুশীলন করে চলেছেন জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমির অনূর্ধ্ব ১০ থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব ১৮-এর অর্ধশত নারী ফুটবলাররা। মেয়েদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো ও তাদের খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ভোমরাদহ ইউনিয়নের জনগাঁও এলাকার দীপঙ্কর রায় (পরিমল) ও মোহন রায়সহ স্থানীয় কয়েকজন যুবকদের উদ্যোগে এবং পৃষ্ঠপোশকতায় ২০২১ সালে জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমির সূচনা হয়। এখান থেকে অনুশীলন করে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে খেলেছেন এই একাডেমির নারী ফুটবলাররা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনগাঁও ফুটবল একাডেমি মাঠে সুশৃঙ্খলভাবে ছোট শিশু ও কিশোরিদের ফুটবল অনুশীলন করতে। তবে আগে সকাল বেলায় ফুটবল খেলার অনুশীলন করলেও এখন কনকনে ঠান্ডার জন্য বিকালে অনুশীলন করছে। পীরগঞ্জ উপজেলার দশম শ্রেণির ছাত্রী অনি। নিয়মিত অনুশীলন করেন জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমিতে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ অনেক জনে অনেক কথা বলে যে, মেয়ে হয়ে কেন ছোট প্যান্ট ও জিন্সের ছোট কাপড় পড়ে ফুটবল খেলবা। এ ধরনের আরো নানা কটু কথা বলত।

আমি তাদের কথা কর্ণপাত না করে আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই আমি এখানে প্রতিদিন অনুশীলন করতে আসি। আমার আশা আমি এখান থেকে দক্ষ খেলোয়ার হয়ে জাতীয় দলে খেলতে চাই। জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমি দলের নেতা (ক্যাপ্টেন) তুলি রায়। তার বাড়ি জনগাঁও বিষ্ণপুর গ্রামে ও লোহাগাড়া ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তিনি বলেন, এই একাডেমির যাত্রা শুরুর লগ্ন থেকে আমি এখানকার একজন সদস্য। তখন থেকেই আমি প্রতিদিন এখানে অনুশীলন করি। প্রথম দিকে অনুশীলন করতে আসতে আমাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আমি থেমে যায়নি। মানুষের কথায় আমি অনুশীলন বন্ধ করিনি।

যারা আমাদের নিয়ে নানা খারাপ কথা বলছে। তারাই একদিন আমাদের সুনাম করবে। সেজন্য আমিও দেখিয়ে দিতে চাই যে নারীরাও ভালো কিছু করতে পারে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দৃষ্টি রানী সোনা বলেন, আগে আমাদের এখানে নারীদের খেলার জন্য অনুশীলনের কোনো জায়গা ছিল না। এই একাডেমি হওয়াতে আমরা এখানে প্রাকটিস করতে পারছি। কিন্তু এখানে চাহিদার তুলনায় খেলার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে অভিভাবকদেরও শুনতে হয়েছে নানা কটু কথা। তবে এখানকার নারী ফুটবলাররা ভালো করায় এখন অভিভাবকরাসহ এলাকার মানুষও তাদের নিয়ে বেশ আশাবাদী।

নরেন্দ্র নাথ রায় নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথা বলত নারীদের খেলা নিয়ে। এখন এই একাডেমিটা হওয়াতে আমাদের মেয়েরা এখানে খেলা শিখতে পারছে ও ভালো করছে। তাই এখন এলাকাবসীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ও তারাও নারীদের নিয়ে আশাবাদী যে, এখানকার মেয়েরা একদিন জাতীয় পর্যায়ে খেলবে ও এলাকার সুনাম ছড়াবে। এখানে শুধু শারীরিক চর্চা ও খেলার অনুশীলনই নয়-এর পাশাপাশি তাদের সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিনা টাকায় বিভিন্ন বিষয়ে টিউশনও করতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। এলাকার নারী ফুটবলারদের খেলায় আগ্রহ রয়েছে অনেক। এই একাডেমির ১৫ জন নারী ফুটবলার বিকেএসপির বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেছে এবং বিকেএসপিতে স্থায়ীভাবে অনূর্ধ্ব ১৬-তে মেঘলা রানী খেলছেন। এরই মধ্যে সে জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য ডাক পেয়েছে বলে জানান, জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক (কোচ) শ্যামা প্রসাদ রায়। একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা ফুটবল খেলবে এটি স্থানীয়রা ভালো চোখে নেননি। তাই শুরুর প্রথম দিকটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছে একাডেমির সংশ্লিষ্টদের। এখন সব ঝড়ঝঞ্ঝা পেড়িয়ে পড়াশোনা থেকে শুরু করে খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের একাডেমির নারীরা। সবার সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের নারী ফুটবল জগতকে পরিবর্তন করে আরো ভালো পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন এই একাডেমির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জুয়েল সরকার। জনগাঁও নারী ফুটবল একাডেমির নারী ফুটবলাদের জন্য প্রতিদিন স্বেচ্ছায় শ্রমদিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রায় ৬-১০ জন মানুষ।