ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাইকারিতে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজার স্থিতিশীল

পাইকারিতে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজার স্থিতিশীল

নওগাঁয় মজুতবিরোধী অভিযানে ধানের দাম কিছুটা কমলেও চালের বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি। খুচরা চাল বাজারে এখনো স্থিতিশীল। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল বাজারে কমেছে বেচাকেনা। স্বর্ণা-৫ মোটা জাতের চাল নেই বললেই চলে। এ বাজারের ব্যবসায়িরা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছে। খুচরা বাজারে চাল সংকট হলে আবারো বাজার ঊর্ধ্বগতি হতে পারে। গত ১৬-২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মজুতবিরোধী অভিযানে ৩৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল বাজার সূত্রে জানা যায়, স্বর্না ৫ মোটা জাতে চাল ৪৮ টাকা, ব্রিআর ২৮ ও ২৯ চাল ৫৫ টাকা, কাটারিভোগ ৬৫ টাকা এবং জিরাশাইল-মিনিকেট ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত ১৮ জানুয়ারিতে ছিল : স্বর্ণা-৫ জাত ৫০-৫২ টাকা, ব্রিআর-২৮ চাল ৫৫-৫৬ টাকা, ব্রিআর-৪৯ চাল ৫৫ টাকা, কাটারিভোগ ও জিরাশাইল ৬০-৬৫ টাকা। চলতি বছরের এক সপ্তাহ পর থেকে ধান-চালের বাজার বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি চালে প্রকারভেদে খুচরা বাজারে ৪-৫ টাকা এবং ধান ১০০-১৫০ টাকা মণ বৃদ্ধি পায়। এতে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করতে শুরু করে। জেলায় গত ১৬ জানুয়ারি থেকে মজুতবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এতে প্রকারভেদে প্রতিমণে ৪০-৫০ টাকা দাম কমেছে। তবে চালের বাজারে দাম কমার কোনো প্রভাব বোঝা যায়নি। গত সোমবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৪৬ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। শহরে পৌর খুচরা চাল বাজার সবচেয়ে বড় বাজার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- এ বাজারে শতাধিক চালের দোকান থাকলেও প্রায় ৪০টির মতো সচল রয়েছে। প্রতিটি দোকানে গড়ে ৩-৪ বস্তা স্বর্ণা-৫ জাতের চালের প্রয়োজন হয়। ব্যবসায়িরা বলছেন, এ চাল কিনতে কেজিতে খরচ ৪৮ টাকা। সেখানে ৪৬ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতে করে একদিনের ব্যবধানে এ চাল বাজারে নেই বললেই চলে। তারা চাল কেনার রশিদ দেখাতে পারেনি।

মেসার্স মালসন রাইচ স্বত্বাধিকারি মানিক প্রামানিক বলেন- গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ১২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। অন্য দিনগুলোতে দিনে ৩-৪ হাজার টাকা বিক্রি হতো। গত কয়েকদিন থেকে বেচকেনার অবস্থা খুবই খারাপ।

তাপস খাদ্য ভান্ডার তাপস কুমার বলেন- দিনে ১-২ বস্তা স্বর্ণা-৫ চাল বিক্রি হয়। জেলা প্রশাসন থেকে গতকাল ৪৬ টাকা দাম বেঁধে দিয়েছে। এ কারণে আর স্বর্ণা চাল কিনছি না। কারণ আমাদের কিনতে খরচ বেশি সেখানে লোকসান দিয়ে বিক্রি করা সম্ভব না। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার হরশি গ্রামের গেরোস্ত আব্দুর রশিদ বলেন- হাট-বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫০-৬০ মণ ধান কিনে তা থেকে চাল উৎপাদন করে বিক্রি করি। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কখনো রশিদ দেয়নি। বর্তমানে যদি রসিদ দিতে হয়, তাহলে দিবো। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাউল বাজারের সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন- আমরা স্বল্প লাভে চাল বিক্রি করি। মোকামে যদি দাম না কমে আমরা তো লোকসান করে বিক্রি করতে পারব না। স্বর্ণা-৫ চাল আমাদের কিনতে খরচ পড়েছে, কেজিতে ৪৮ টাকা। সেখানে ৪৬ টাকা আসলে কীভাবে বিক্রি করব। কম দামে চাল কিনতে পারলে ৪৬ টাকায় বিক্রি করতে পারব। এখন বলতে গেলে আমরা চাল পাচ্ছি না। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। নওগাঁ জেলা চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন- পাইকারি মোকামে প্রতিকেজি স্বর্ণা-৫ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা এবং জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ৫৬-৬৪ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে কেন কমেনি বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে মোকামে চাল বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। জেলার বাইরে চাল যাচ্ছে না। ব্যবসায়িরা হয়তো ভাবছেন, তাদের কাছে যে পরিমাণ চাল আছে তা বিক্রি করে মোকাম থেকে কিনবে। অভিযানের পর থেকে চালের দাম কমেছে এবং ধানের দাম মণে ৫০-৬০ টাকা কমেছে। নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: গোলাম মওলা বলেন- ব্যবসায়িদের কাছে চাল কেনার রসিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। কোনো চালকল মালিকের কাছ থেকে ব্যবসায়িরা চাল কিনেছে তার রসিদ দেখাতে হবে। ব্যবসায়িদের যদি কোনো চালকল মালিক চাল দিতে না চান আমাদের কাছে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত